ন্যাভিগেশন মেনু

প্লাবনের বিরুদ্ধে পারুলের যৌতুক মামলা


তারা দু’জনেই সাংবাদিক। সমাজের দর্পণ দু’জনে।তাও পাঠকপ্রিয় দু’টি দৈনিক সংবাদপত্রের।এবার তারা নিজেরা মান-সম্মান খুইয়ে খবর হয়ে এসেছেন দেশের একাধিক সংবাদপত্রে।

যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সমকালের স্টাফ রিপোর্টার সাজিদা ইসলাম পারুল। সোমবার রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল থানায় তিনি মামলাটি করেন। 

পারুল তার মামলার এজাহারে বলেছেন, প্লাবনও সাংবাদিক হওযায় তাদের প্রায়ই দেখা ও কথাবার্তা হতো। সেই সূত্রে পারুলের সঙ্গে প্লাবনের ঘনিষ্ঠতা হয়। 

সেই ঘনিষ্ঠতার পর প্লাবনের আগ্রহে গত ২ এপ্রিল দুজনে বিয়ে করেন। স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসার শুরুর পরই পারুল তাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বললে প্লাবন তার কাছে যৌতুক দাবি করেন। তার কাছে একটি ফ্ল্যাট চাওয়া হয়। 

তখনই পারুল বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিয়ের পরই তিনি জানতে পারেন, বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্লাবনের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবু তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন। 

এরপর তার ওপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন। এ শারীরিক নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে যায়। সামাজিক মর্যাদার ভয়ে তিনি নিরবে সব সহ্য করে যান।

প্লাবনের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা রহমান হাজীর গ্রামে। বাবার নাম মো. সামছুল হক। বর্তমানে প্লাবন বসবাস করেন হাতিরঝিল থানাধীন মীরবাগে। 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ  বলেন, যৌতুক দাবি, নির্যাতন ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে রেজাউল করিম ওরফে প্লাবনকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, বিয়ের এক মাসের মাথায় প্লাবন তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চিলমারীতে যান। এ সময় পারুল যেতে চাইলে তাকে মারধর  করে। 

এরপর পারুল  নিজেকে সন্তানসম্ভবা বলে প্লাবনকে জানালে তার ওপর মারধর বেড়ে যায়। এভাবে মারধর করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে বলেও আকুতি করেন। এতে প্লাবন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মারতে থাকেন, পেটেও আঘাত করেন। 

পরদিন সকালে পারুলকে বাসায় রেখে প্লাবন গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে গর্ভাবস্থায় নারীদের যেসব সমস্যা হয়, সেই সমস্যার কথা ফোনে স্বামীকে জানান। এতে তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি এবং মায়ের অসুস্থতার কারণে আপাতত ঢাকায় আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

পারুল অসুস্থ শাশুড়িকে দেখার জন্য ৫ মে বিকেলে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শ্বশুর বাড়ি পৌঁছান । শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করে প্লাবনের সাড়া পাননি। এ সময় প্লাবনের বড় ভাই এম এ আজিজ ও ছোট ভাই এস এম নিজাম উদ্দিন এবং বাবা ও মা বেরিয়ে আসেন। 

তারা পারুলকে পূত্রবধু হিসাবে অস্বীকার করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি পারুলের প্রতি মারমুখী হয়ে ওঠেন। পারুলকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, তার ছেলে যৌতুক হিসেবে যা চেয়েছে, তা পূরণ করতে পারলে এই বাড়িতে তার স্থান হবে। 

শাশুড়ির ভূমিকা দেখে পারুল বুঝতে পারেন মায়ের অসুস্থতার কথা মিথ্যা বলেছেন প্লাবন। প্লাবনের দুই ভাইও ঢাকায় প্লাবনকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার দাবি করেন। 

একপর্যায়ে সবাই মিলে পারুলকে চড়থাপ্পর ও চুল ধরে টানা-হেঁচড়া করেন। এ পরিস্থিতিতে পারুলের সঙ্গে থাকা স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক তাকে উদ্ধার করে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। মারধরের ঘটনায় চিলমারী থানায় মামলা করতে যান পারুল। থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা তাকে বলেন, যেহেতু তাদের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়, সংসারও ঢাকায়, তাই ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করাই ভালো। 

ঢাকায় ফিরে আসেন নির্যাতিত পারুল। এরই মধ্যে তার গর্ভের ভ্রূণটি নষ্ট হয়ে যায়। যৌতুকের দাবিতে স্বামীর উপর্যুপরি নির্যাতন এবং মানসিক অশান্তির কারণে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে- এজাহারে এমন উল্লেখ করে প্লাবনের বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এনেছেন পারুল। 

মামলা দায়েরের পর সাজিদা ইসলাম পারুল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি বলেন,  প্লাবন বাইরে ঘুরে বেড়ালে তার নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

এস এস