ন্যাভিগেশন মেনু

বগুড়ার হাট-বাজারে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি


বগুড়াসহ দেশে উত্তরের বাতাসে এখনো হিম ধরেনি। সন্ধ্যা নামলে কুয়াশাও পড়ে না। শীত আসার দেরি থাকলেও শীতকালীন সবজিচাষীরা এখন ব্যস্ত। আগামজাতের সবজি চাষে মাঠে নেমেছে কৃষক।

ইতোমধ্যে বগুড়ার হাট-বাজারে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি বেচাকেনা জমে উঠেছে। ভালো ফলনে ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বগুড়ার উৎপাদিত সবজি।

বিগত বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের শাক সহ ৪২ প্রকারের সবজি উৎপাদন করে বগুড়ার চাষীরা। সারাবছর ধরে এসব সবজি চাষ হয়ে থাকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। তবে শীতকালীন মৌসুমে বেশি সবজি চাষ হয়। 

দেশে ডায়াবেটিক ও করোনাভাইরাসের কারণে সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব সবজি ইমিউনিটি সিস্টেমকে দ্রুত কার্যকর করে এমন সব ধরণের সবজির ভোক্তা ও ক্রেতা বেড়েছে। সবজির চাহিদার কারণে কৃষকদের মাঝে উন্নতজাত ও বেশি করে সবজি চাষে পরামর্শ ও উৎসাহিত করা হয়েছে।

এদিকে সবজি চাষীরা এখন জমি তৈরী করে যত্ন নিচ্ছে আর সবুজ স্বপ্নের আশায় বুক বেঁধে আছে। অনেক চাষী আবার আগামজাতের সবজি চাষ করে বাজারে তুলেছে। শীতের সবজি আগাম বাজারে নিতে পারলে দাম বেশি পায় বলে চাষীরাও যেন একরকম প্রতিযোগিতায় নেমেছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় প্রচুর পরিমানে সবজি চাষ হয়ে থাকে। বগুড়ার সবজিই এখন ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তাদের চাহিদা পুরণ করে থাকে। সবজির যোগান দিতেই আগাম শীতকালীন শাক-সবজি চাষে মাঠে নেমেছে চাষীরা।

ভোর থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত সবজি খেতে সময় দিচ্ছেন চাষীরা। বগুড়ায় শীতকালীন (রবি) ও গ্রীষ্মকালীন (খরিপ) সবজি চাষাবাদ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন সবজি উত্তোলন প্রায় শেষ হয়েছে। মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষীরা। আগামজাতের সবজি কিছু এলাকায় চাষ হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার চাষীরা আগামজাতের মুলা, ফুলকপি, পালংশাক, মুলা শাক ও শীম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। 

এ বছর ১৮ হাজার ১৮৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ফলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৩ মেট্রিকটন। 

তবে শীত মৌসুমে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। সবজি কেনা-বেচাসহ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন চাষীরা। শীতকালে ১২ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে এবার সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। 

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বামুনিয়া, শাহনগর, কামারপাড়া, আমরুল অঞ্চল শাকসবজি চাষের প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়াও বেগুন চাষে দাড়িগাছা, মরিচ চাষে গোহাইল ও জামাদার এলাকা বিখ্যাত। 

বাজারে আগাম টমেটো আনতে দুরুলিয়া থেকে খোট্রাপাড়া এলাকার কৃষক মাচা তৈরি করে টমেটো চাষ করছে। শীমও এলাকার বেশ চাষ হয়ে থাকে। শীমের আগামজাতের মাচায় কিছুটা ফুল ধরেছে। 

জেলার শাজহানপুর উপজেলা সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া, শাখারিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাকসবজি চাষাবাদ ও আগাম জাতের সবজি উত্তোলন করছেন চাষীরা। 

এছাড়া শিবগঞ্জ, কাহালু, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর আদমদিঘি উপজেলায় উল্লেখ্যযোগ্য পরিমান শীতকালীল সবজি মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শীম, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ও পেঁয়াজের চাষ হয়।

এরইমধ্যে আগাম জাতের সবজি উঠেছে হাটবাজারগুলোতে। ভালো দামের আশায় অনেকেই আগাম জাতের এসব সবজি বাজারে নিয়ে এসেছে। 

উত্তরের বৃহৎ পাইকারি হাট মহাস্থানে গতকাল সিম প্রতি মণ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা, ফুলকপি ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, পেপে ২০০ টাকা, বেগুন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মূলা ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, পটল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, করলা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, লাউ প্রতি পিছ ১০ থেকে ২০ টাকা, মিষ্টি লাউ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, বগুড়ায় সবজি চাষ শুরু হয়েছে। গত বছর ভালো ফলন পাওয়া গিয়েছিল। বগুড়ায় সবজি চাষে সবসময় সফলতা পেয়ে থাকে। এ বছরও সফলতা পাবে। অক্টোবর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতকালীন সবজি চাষাবাদ ও হাটে বাজারে পাওয়া যায়। 

মহাস্থান হাটের সবজি বিক্রেতারা জানান, শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চাষ করেছেন তারা। বাজারে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। ভালো ফলনে ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষীরা। 

পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ভালোমানের সবজি কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও হাটবাজারের খাজনার কারণে বগুড়া থেকে অন্য জেলায় সবজি পাঠাতে তাদের খরচ হয়। এ কারণে দেশের অন্যান্য স্থানে দাম বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, তিনি লাউ পাঠাচ্ছেন সিলেটে। প্রতিটি লাউ এখানে ১০ থেকে ২০ টাকায় কিনছেন। একটি লাউ অন্য জেলায় পাঠাতে তার ৬ থেকে ৭ টাকা খরচ হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. এনামুল হক জানান, সারাবছর এ জেলায় সবজি চাষ হয়। বগুড়ায় প্রতি বছর দুই মৌসুমে ১৮ হাজার ১৮৮ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা সোয়া লাখ মেট্রিকটন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান স্থানে যাচ্ছে বগুড়ার সবজি।

এএস/এডিবি/