ন্যাভিগেশন মেনু

বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধি, পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ


উজানের ঢলে বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন উপজেলার ৪০ হাজারেও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। এতে পানিবন্দি মানুষ বাধে আশ্রয় নিয়েছে আবার অনেকে ঘরের ভেতরেই বাস করছেন।

জেলা প্রশাসন ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব এলাকার জন্য ১২০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করেছে।

এদিকে সোমবার (৩০ আগস্ট) বগুড়ার জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বাড়ছে।

এতে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, হাাটশেরপুর ইউনিয়নের ৮২টি চরসহ চন্দনবাইশা, কামালপুর, কুতুবপুর এবং সদর ইউনিয়নের দুর্গম চর এবং নদীতীরবর্তী মোট ৫৬টি গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একইসাথে ধুনটের শতাধিক পরিবারসহ সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের ৬০০ পরিবার, তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের ১ হাজার ৫০ পরিবার ও মধুপুর ইউনিয়নের ১২৫ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় সারিয়াকান্দি উপজেলা এলাকায় ৭৪ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সোনাতলার ২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, আমন বীজতলা, পাট, মাষকলাই, শাকসব্জির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় সারিয়াকান্দির ৫৬টি গ্রামের ৯ হাজার ৫০০টি পরিবাররের ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে বৃষ্টির কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে নদীর তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ রক্ষা বাঁধ ভাঙার কোন আশংকা নেই। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকেই যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। তবে ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে তা বিপদসীমা অতিক্রম করে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদী তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলের মোট ৫৬টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি ঢুকেছে চরবেষ্টিত বোহাইল ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে। তার পাশের কাজলা ইউনিয়ন এবং দূর্গম চর চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি করে আরও ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের ৮টি, পাশের সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ৬টি, চর বেষ্টিত কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ৫টি এবং পাশের ধুনট উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন চন্দনবাইশা ইউনিয়নের আরও ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন ১টি মাদরাসা ও ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

চর কার্ণিবাড়ি, চালুয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের বসতবাড়িগুলো উঁচুতে থাকায় সেগুলোতে এখনও পানি ঢোকেনি। নদী তীরবর্তী হওয়ায় তাদের ফসলি জমিগুলো তলিয়ে গেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের বাসিন্দা সায়মন, শামিম, রফিকুল, ময়েজ আলী জানান, নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নিচু জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সেগুলো ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে কুতুবপুর বাধ সংলগ্ন ঘুঘুমারী এলাকায় দেখা গেছে, নদী ও বাঁধের মাঝমাঝি থাকা কয়েকটি পাড়ার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ওই এলাকার লোকজন ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে এখন বাধে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করেছে। চলাচলের রাস্তায় এখন গলা পর্যন্ত পানি। নৌকা নিয়েই তারা যাতায়াত করছে। তাদের জমির ফসলও নষ্ট হওয়ার পথে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম রবিবার দুপুরে জানান, বন্যায় রোপা আমনসহ এ পর্যন্ত ৭৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসাথে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

সারিয়াকান্দি চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, দলিকা, হাটবাড়ি, নোয়ারপাড়া চরের ৬০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি অন্য চরের আরও কয়েক হাজার মানুষ।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, যমুনায় পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার চরবেষ্টিত এবং তীরবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের ৫৬টি গ্রামসহ চরাঞ্চলের সাড়ে ৯ হাজার পরিবারের ৩৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই খাদ্য এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এদিকে সোনাতলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পূর্ব সুজাইতপুর, রাধাকান্তপুর, খাটিয়ামারি, বালুয়াপাড়া, তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের সরলিয়া, মহব্বতেরপাড়া, খাবুলিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, মহেষপাড়া ও বালুয়া ইউনিয়নের আমঝুপি এলাকার মোট ২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, আমন বীজতলা, পাট, মাষকলাই, শাকসব্জির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানিয়েছেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ধারণা করছি খুব দ্রুতই বন্যার পানি নেমে যাবে। গাইঞ্জা জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। যে পরিমাণ ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশা করছি তা আমরা রিকভার করতে পারবো।’

এএসবি/সিবি/এডিবি/