ন্যাভিগেশন মেনু

বদলি জেল খাটা মিনু: হাইকোর্টের আদেশ ৫ এপ্রিল


চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ বছর ৯ মাসের বেশি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুমা আকতারের পরিবর্তে সাজা খাটা মিনু আকতারকে নিয়ে আদেশের জন্য ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে শনিবার (৩১ মার্চ) এ ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। মূল আসামি কুলসুমের আপিলের পক্ষের আইনজীবী ইকবাল হোসেনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত ৫ তারিখের মধ্যে কুলসুমের পক্ষে আপিলের জন্য ইকবাল হোসেনের সঙ্গে নথি নিয়ে যারা যোগাযোগ করেছেন এবং পরে নথি নিয়ে গেছেন, তাদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরও দাখিল করতে বলেছেন। 

এর আগে গত ২৩ মার্চ সকালে অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মিনু আকতারকে তোলা হয়।

এর পর গত ২৪ মার্চ মিনুর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা উপ-নথি পাঠান।

সেসময় আদালতের পেশকার ওমর ফুয়াদ জানিয়েছিলেন, জেলখানার ছবিসংবলিত রেজিস্ট্রার খাতা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। রেজিস্ট্রারে কারাগারে থাকা নারীর সঙ্গে প্রকৃত আসামির ছবির অমিল রয়েছে। এ আসামির জামিনের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল রয়েছে। যার নম্বর-৪২৯৩/১৯। এ কারণে বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করা হবে।

এ মামলায় মিনুর পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

আবেদনকারী আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, মিনু আক্তার ও তার তিন শিশুকে এভাবে দেখার পর আমার মনে হলো ঘটনাটা তদন্ত করা দরকার। সেটি দেখতে গিয়ে দেখলাম আসলে যিনি হত্যা মামলার আসামি তিনি পলাতক। আর তার হয়ে কারাভোগ করছেন মিনু।

এদিকে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিনু আক্তার দাবি করেন, তিন বছর আগে রমজান মাসে ভোগ্যপণ্য দেওয়ার নাম করেই কুলসুমা আক্তার তাকে আদালতে নিয়ে আসেন। কুলসুমা আক্তারের শেখানো মতো আদালতের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাকে কারাবাস করতে হচ্ছে।

একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। আর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু। বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের নজরে আনেন।

২০১৮ সালের ১২ জুন কোহিনূর বেগম নামে এক পোশাক শ্রমিককে হত্যার দায়ে এ মামলায় কুলসুমা আক্তারের যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। আর কুলসুমা আক্তার নামে অন্য এক আসামির হয়ে কারাগারে রয়েছেন মিনু আক্তার।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে নগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জের একটি বাসায় মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পোশাক শ্রমিক কোহিনূর আক্তারকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এরপর একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অপর পোশাক শ্রমিক কুলসুমা আক্তার। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে কোহিনূরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে রিপোর্ট দিলে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম আসামি কুলসুমা আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর এ মামলায় কারাগারে যান কুলসুমা।

তিনি ১ বছর তিন মাস কারাভোগ করেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালত ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তার জামিন মঞ্জুর করেন। কুলসুমা আকতার ওইদিন কারাগার থেকে ছাড়া পান।

রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তারের পরিবর্তে মিনু আকতার ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। এর পর থেকে ২ বছর ৯ মাস ধরে সাজা খাটছেন তিনি।

১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নয় বলে জানান। পরে বিষয়টি তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর তিনি বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন।

এক্ষেত্রে ভুল আসামি হিসেবে মিনু আক্তারের তিন বছরের সাজাভোগের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে দুষছেন সরকার নিয়োজিত কৌঁসুলি গোলাম মওলা মুরাদ।

আবেদনকারী আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, চাল-ডাল যখন দেবে তখন তোমার নাম ধরে ডাকবে, সেই সময় তুমি হাত তুলবে এভাবে মিনু আক্তারকে শেখায় কুলসুমা আক্তার। আদালতের লোকজন যখন নাম ধরে ডাকে তখন কুলসুমা আক্তারের শেখানো কথায় সাড়া দিয়ে হাত তোলে সে।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী বলেন, কুলসুমার যে মূল্যায়ক ছিল, তার উচিত ছিল এটি দেখার। সে যদি আত্মসমর্পণ করে থাকে, সে সেটি জেনেশুনে এ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কারাগারের উচিত ছিল এ আসামির ছবি এবং আগের আসামির ছবি এবং স্বাক্ষর এক আছে কিনা সেটা দেখা।

চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতে মিনু আক্তারের কারাবাসের তথ্য উঠে আসলেও উচ্চ আদালতে এ হত্যা মামলার আপিল শুনানি চলছে। এ অবস্থায় নিষ্পত্তির জন্য পুরো নথি উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

ওয়াই এ/ওআ