ন্যাভিগেশন মেনু

বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে চিন


বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চিন। আগামী ১ জুলাই থেকে এ সুবিধা কার্যকর হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তবে এই সুবিধার ফলে বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিদ্যমান সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চিন অবহিত করে যে, লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। তবে শর্তারোপ করে যে, স্বল্পোন্নত দেশকে প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিদ্যমান সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না।

স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে ২০১০ সাল থেকে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করেছে চিন। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ যাদের সাথে চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে তাদেরকে চিনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়।

চিন প্রদত্ত এ সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার অনুকূল কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা রয়েছে এমন অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি সম্ভাবণাময় পণ্যে শুল্ক-মুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদানের জন্য চিনকে অনুরোধ জানায়। 

উল্লেখ্য, এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য মূল্য সংযোজনের হার ৩৫ শতাংশ হলেও স্বল্পোন্নত দেশের জন্য চিনের প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় মূল্য সংযোজনের হার ৪০ শতাংশ। চিনের আরোপিত শর্ত মেনে  স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের মতামত গ্রহণ ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে করে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্ক-মুক্ত সুবিধা গ্রহণের জন্য চিনের সাথে আলোচনা শুরু করে।

দীর্ঘ নেগোসিয়েশনের পর গত ১৬ জুন ২০২০ চিন বাংলাদেশকে শর্তহীন ভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (অর্থাৎ সর্বমোট ৮ হাজার ২৫৬টি HS Code) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে আদেশ জারি করে।

এর ফলে চিনের বাজারে বাংলাদেশের সকল সম্ভাবনাময় পণ্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে, যা ১ জুলাই ২০২০ থেকে কার্যকর হবে। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর আওতায় এক-পাক্ষিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে এ সুবিধা প্রদান করায় বাংলাদেশকে এর বিপরীতে কোন ছাড় দিতে হবে না।

প্রসঙ্গত, চিন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিনের বাজারে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় সকল পণ্য চিনে শুল্কমুক্ত কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে।

ফলে, চিনে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

চিন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চিন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নীচে। 

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে চিনের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি এবং বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীনের নেতৃত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে চিনের সাথে বিনিময় পত্র (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) স্বাক্ষর করে।

এডিবি/