ন্যাভিগেশন মেনু

বাংলাদেশিদের ভারতে নামার পর এয়ারপোর্টে আর সময় অপচয় নয়


ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কয়েক মাস বিরতির পর ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির আওতায় দিন সাতেক হলো উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে বিমানবন্দরে নেমে বাংলাদেশি যাত্রীদের কোনও ধরনের হয়রানি বা দীর্ঘ অপেক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে কিনা– তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে চরম বিভ্রান্তি ও সন্দেহ-সংশয়।  

বাংলাদেশি নাগরিকদের এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। কেননা আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এবং ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করেই তারা বিমানবন্দর ত্যাগ করতে পারছেন। এখন বিমানবন্দরে রেজাল্ট না আসা অবধি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার কোনও ঘটনা নেই, আর পিসিআর টেস্টের খরচও বেঁধে দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচশো রুপির (৫৭৮ বাংলাদেশি টাকা বা ৬.৮০ ডলার) মধ্যেই।

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন বাংলাদেশ থেকেই। ওই সংখ্যাটা আমেরিকা, ব্রিটেন বা ইউরোপের যে কোনও দেশের তুলনায় অনেক বেশি। করোনা মহামারির কারণে গত দেড় বছরে সেই লক্ষ লক্ষ পর্যটকের ভারতে যাওয়া হয়নি। কিন্তু এখন ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা স্তিমিত হতেই ভারত চাইছে বাংলাদেশ থেকে আবার তারা আসুন – আর সে কারণেই বিমানবন্দরে তাদের দুর্ভোগ কমানোর যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে,এতদিন যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতে আসা যাত্রীদের জন্যই শুধু বিমানবন্দরে বাধ্যতামূলক আরটিপিসিআর টেস্ট করা হচ্ছিল। গত পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে আরও সাতটি দেশ।এ দেশগুলো হল-দক্ষিণ আফ্রিকা,বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, চিন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে। 

কিন্তু এই সব দেশ থেকে ভারতে যাওয়া যাত্রীদের যাতে টেস্টের জন্য অযথা হয়রানি না হয়, তার জন্য নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যবস্থা। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীরা যদি সরাসরি দিল্লি, চেন্নাই বা কলকাতা বিমানবন্দরে গিয়ে নামেন তাহলে প্রথমে বিমান থেকে নেমে টেস্ট ‘বুক’ করতে হবে। 

এই টেস্ট আগে থেকেও অনলাইনে বুক করা যায়, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।প্রতিটি এয়ারপোর্টেই এর জন্য একাধিক কাউন্টার করা হয়েছে, মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটেই সেখানে ডিজিটাল পেমেন্ট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়েই টেস্ট বুক করা সম্ভব। সঙ্গে দিতে হবে যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর, যোগাযোগের ফোন নম্বর এবং ভারতে থাকার ঠিকানা।

কিছুদিন আগেও এই টেস্টের জন্য যাত্রীপিছু চার-পাঁচ হাজার রুপি করে নেওয়া হচ্ছিল, তবে তার মধ্যে পরীক্ষা ছাড়াও লাউঞ্জে অপেক্ষা করা, খাবার খরচ ইত্যাদিও ধরা ছিল। তবে যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে সেই পদ্ধতি বাতিল করে এখন শুধু টেস্টের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচশো রুপি ফি ধার্য করা হয়েছে। 

দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই টেস্ট করার দায়িত্ব পেয়েছে জিনস্ট্রিংস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা তারা যাত্রীপিছু পাঁচশো রুপি করেই নিচ্ছে।টেস্ট বুক করার পরই পাশের একাধিক বুথের কোনও একটিতে বিদেশি যাত্রীদের গলা ও জিভ থেকে সোয়াব দিতে হবে নার্সদের কাছে। 

এরপর তারা রসিদে স্যাম্পল গিভেন (নমুনা সংগৃহীত) সিলমোহর মেরে দিলেই চলবে। বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার কোনও দরকারই নেই।গোটা প্রক্রিয়াটা সারতে দশ-বারো মিনিটের বেশি লাগছেই না।কারণ এমনিতেই এখন আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ওঠানামা খুব কম। আর প্রতিটি সংস্থাই কোভিড টেস্টের জন্য প্রচুর সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ করেছে।

নমুনা দেওয়ার পাঁচ থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই বিদেশি পর্যটকরা মোবাইলে পেয়ে যাচ্ছেন তাদের টেস্ট রিপোর্ট। পজিটিভ হলে সেক্ষেত্রেই কেবল তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, নইলে নিজ ব্যবস্থায় তাদের হোম আইসোলেশন বা সেলফ আইসোলেশনই যথেষ্ট।

এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হওয়া এয়ার বাবল সিস্টেমের আওতায় এখন ভারত ও বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন, এয়ার ইন্ডিয়া ও বিমান বাংলাদেশ আবার ফ্লাইট চালু করেছে। এছাড়া ভারতের স্পাইসজেট, ইন্ডিগো এবং বাংলাদেশের ইউ এস বাংলা এয়ারলাইনও ফ্লাইট চালাচ্ছে।

এসব এয়ারলাইনের কোনওটিতে যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে নামছেন, তাদের তাই হয়রানির আশঙ্কায় অযথা দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, বিদেশি যাত্রীদের যাতে টেস্টের কারণে দুর্ভোগে পড়তে না-হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।

এস এস