দূষণমুক্ত পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ শুরু করেছে।
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এবার চট্টগ্রামের মিরসরাই-সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে একশ একর জমিতে গড়ে উঠছে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ সহ ব্যাটারি ও চার্জিং ইউনিট ও একের পর এক বিশ্বমানের কারখানা।
বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে এরই মধ্যে ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশ কিছু গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করেছে। তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ অটো ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কারখানাটির কাজ এখন প্রায় শেষের পথে। এতে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এই কারখানায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদার চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড। এটি চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি। চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানা রয়েছে জাপানের হোন্ডা, নিশান, ফ্রান্সের সিটরয়েনসহ জাপানি ও ইউরোপীয় কয়েকটি অটো ইন্ড্রাস্ট্রির।
এসময় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বাংলাদেশ অটো ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ মান্নান খান জানান, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের কারখানায় মোট বিনিয়োগ হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ দুই ধাপে বিনিয়োগ করা হবে।
১০০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত সেই কারখানা থেকে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আসতে পারে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যেই— এমন সম্ভাবনার কথা জোরালো স্বরে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। শুধু তাই নয়, ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই গাড়ি গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার আশাবাদও জানাচ্ছেন তারা। জাপানি ও কোরিয়ান গাড়ির নকশায় তৈরি হবে গাড়িগুলো।
পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় উন্নত বিশ্বের দেশগলোতে এরমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি। তবে বাংলাদেশের রাস্তায় তেমন চোখে পড়ে না এসব গাড়ি। এর অনেকগুলো কারণ থাকলেও অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় চার্জিং স্টেশনের অভাব।
প্রসঙ্গত, এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমদানি করা গাড়ির জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন, নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি শুরু হবে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎচালিত যানবাহন সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বৈঠকেও বসেছেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আমদানির পর সেগুলোর চার্জিং স্টেশন কোথায় হবে বা কেমন হবে কিংবা ট্যারিফ কেমন হবে— এসব বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে।
এদিকে পুরো বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক ইভি চার্জিংয়ের সুবিধার আওতায় আনতে পরীক্ষামূলক প্রথম চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে। এছারা বাংলাদেশে জার্মানির অটোমোবাইল ব্রান্ড অডির ডিস্ট্রিবিউটর প্রোগ্রেস মোটরস ও সফটওয়ার সল্যুশন কোম্পানি সেন্টিনেল টেকনোলজির যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘এখন চার্জ’-এর কার্যক্রম।
প্রসঙ্গত, রাজধানীতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, পেট্রোলচালিত গাড়ির প্রতি এক হাজার কিলোমিটারের জন্য যেখানে ৫৩৭৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে একই দূরত্বের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে খরচ হবে ১২৫০ টাকা। এছাড়া পেট্রোলচালিত গাড়ির চেয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশি এবং এটি পরিবেশবান্ধব।