ন্যাভিগেশন মেনু

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি


কিংবদন্তি বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১০৫তম জন্মদিন আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান।

বাউল শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছিল ছেলেবেলা থেকেই। শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তিনি বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে।

কিংবদন্তি এই বাউল সশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি কোটি তরুণসহ সব স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা শাহ আবদুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ-দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।

তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে।

তিনি জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষিকাজ করে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন। গানে-গানে অর্ধশতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে।

শাহ আবদুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শ’র বেশি গান।

তার কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘আমি কুলহারা কলঙ্কিনী’, ‘গাড়ি চলে না চলে না’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে‘, ‘বসন্ত বাতাসে’ ইত্যাদি।

শাহ আবদুল করিম ৬টি গানের বই লিখেছেন। এগুলো হলো- ‘আফতাব সঙ্গীত’, ‘গণসঙ্গীত’, ‘ধলমেলা’, ‘কালনীর ঢেউ’, ‘ভাটির চিঠি’ ও ‘কালনীর কূলে’।

বাংলা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।

লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ, দুদ্দু শাহ, দুরবীন শাহর দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন আবদুল করিম।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক। পেয়েছেন সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, সিলেট সিটি করপোরেশন নাগরিক সংবর্ধনা, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, অভিমত, শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, খান বাহাদুর এহিয়া সম্মাননাসহ বহু পদক, সম্মাননা ও সংবর্ধনা।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ভাটির এই গুণী মানুষ। মৃত্যুর পর সর্বস্তরের বিশেষ করে সাধারণের কাছে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বাউল শাহ্ আব্দুল করিম।

ওয়াই এ/এডিবি