ন্যাভিগেশন মেনু

বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়ন অন্বেষণ করছে আরও উন্মুক্ত চীন


চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল বিশাল জাহাজ চীনের পূর্বাঞ্চলীয় তটসীমার ১৫ কিলোমিটার দূরে ইয়াং খৌ বন্দরে নোঙ্গর করে ১৮ লাখ টনের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস খালাস করবে। আর এসব গ্যাস ইয়াংসি নদীর ব-দ্বীপের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার পরিবারে পাঠানো হবে। বন্দর ব্যস্ত হলে বৈদেশিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হয়। তাই প্রথম প্রান্তিকে ইয়াং খৌ বন্দর যে জেলায় অবস্থিত তথা রু তোং জেলার আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

ইয়াংখৌ বন্দর“মহান থোংচৌ উপসাগর”বন্দর এলাকায় অবস্থিত। এলাকাটির নির্মাণ ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। গত দশ বছরের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি ২ লাখ টন পর্যায়ের গভীর জলের বন্দর এবং ইয়াংসি নদী কন্টেইনার পরিবহনের নতুন প্রস্থান পোর্ট হবে বলা আশা করা হচ্ছে।“প্রাচ্য বন্দর” নামে পরিচিত এর দশ বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চীনের উন্মুক্তকরণের দৃষ্টিভঙ্গিতে অব্যাহতভাবে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্তির ক্ষুদ্র চিত্র। 

গত দশ বছরে চীন উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সংস্কার, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করে,এবংউন্মুক্তকরণের নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করে। বিদেশী বিনিয়োগ আইন প্রণয়ন করে,বিদেশী বিনিয়োগের বাজারে প্রবেশের জন্য নেতিবাচক তালিকা হ্রাস করে, উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করে,এবং“এক অঞ্চল এক পথ”বন্ধু চক্র বাড়ায়। সবমিলিয়ে চীন অব্যাহতভাবে আরও প্রশস্ত ও আরও গভীর পর্যায়ের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সুযোগ ভাগাভাগি  এবং উন্নয়ন অন্বেষণ করতে থাকে। 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালে চীন ১১ হাজার ১৭১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বৈদেশিক পুঁজি ব্যবহার করে। যা ২০২১ সালে ১৭ হাজার ৩৪৮ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।জাতিসংঘ কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তথাআঙ্কটাডের রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১২ সালে বিশ্বের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২১ সালে তা ১.৬৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

গত দশ বছরের এই বিশাল পরিবর্তনের পরিসংখ্যান চীনা বাজারে বিদেশী বিনিয়োগের পক্ষের প্রমাণ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একাডেমির আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণালয়ের উপ-প্রধান বাই মিং বলেন, দশ বছরে যদিও বিপরীত বিশ্বায়ন ও বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ কিছুটা বিদ্যমান ছিল, তবুও চীন আরও সার্বিক, গভীর ও বহুবিধ উন্মুক্তকরণ কাঠামো সৃষ্টি করেআরও ব্যাপক পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়নে অবিচল থাকে।

দশ বছরে অব্যাহতভাবে রপ্তানি সম্প্রসারণ জোরদার করা থেকে রপ্তানি সম্প্রসারণ উন্নত করা হলো চীনের উন্মুক্তকরণের মান উন্নত করার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার পর চীনের মালামাল আমদানির বার্ষিক বৃদ্ধি ১১.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটা একই সময় বিশ্ব মালামাল আমদানির বৃদ্ধির হারের প্রায় ২.২ গুণ। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ চীন টানা ১২ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় আমদানি বাজার ছিল। 

২০১০  থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ব আমদানি বৃদ্ধিতে চীনের অবদানের হার ২৭.৭ শতাংশ ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে অনেক বেশি।আগামী দশ বছরে পণ্য আমদানির মোট পরিমাণ ২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।এটা চীনা বাজারকেবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণগন্তব্যেপরিণত করেছে। 

নরম ও সুগন্ধি থাই আঠালো চাল লাওসের পিয়েনটিয়ান থেকে ইয়ুননান প্রদেশের মোহান স্থলবন্দর দিয়ে চীনে প্রবেশ করে। প্রায় তিনদিন সময় নিয়েএসব চাল পশ্চিম চীনের ছোংছিংতে পৌঁছে ড্রাগন নৌকা উত্সবে জোং জি বাড়ানোর ভালো উপাদানে পরিণত হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন-লাওস রেলপথ চালু হবার পর নতুন লজিস্টিক চ্যানেল সংযুক্ত হয়েছে। 

গত দশ বছরে চীনের পরিষেবা পণ্যভোগের অব্যাহত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতমানের পরিষেবা সরবরাহের প্রতি  সমাজের চাহিদা আরও বেড়েছে। একই সময় নতুন যুগে উন্মুক্তরণ উন্নয়ন পণ্য বাজার উন্মুক্তকরণ থেকে পরিষেবা শিল্প বাজারের উন্মুক্তকরণের দিকে উন্নত ত্বরান্বিত করছে।

বিশ্বের প্রথম আমদানি প্রতিপাদ্য হিসেবে জাতীয় পর্যায়ের মেলা হিসেবে পঞ্চম আমদানি মেলা চলতি বছরের নভেম্বরে শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্য, গাড়ি, প্রযুক্তি সরঞ্জাম, পণ্যভোগ, চিকিৎসা যন্ত্র ও চিকিৎসা সেবা এবং পরিষেবা বাণিজ্য—এ ছ’টি প্রদর্শনী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বিশেষ এলাকা স্থাপিত হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত নতুন দফা অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের তালিকায় বিশ্বের ৫শ’শক্তিশালী ও বিভিন্ন খাতের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ শতাংশ রয়েছে। 

দশ বছরে ফ্যাক্টর প্রবাহ টাইপ উন্মুক্তরণ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তরণ পর্যন্তচীন উন্মুক্তকরণের মান উন্নত করার গুরুত্বপর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছে। শূণ্য থেকে বিকাশ, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ২০১৩ সাল থেকে চীন যথাক্রমে ২১টি অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক অঞ্চল স্থাপন করে। ফলে বিভিন্ন দিক সমন্বয় এবং স্থল-নৌ সমন্বিত উন্নয়নের নতুন উন্মুক্তকরণ পরিস্থিতি গড়ে তুলে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগ বাজারে প্রবেশাধিকারের জন্য নেতিবাচক তালিকা আরও ছোট এবং বিদেশী বিনিয়োগ শিল্পকে উত্সাহিতকরণের তালিকা আরও লম্বা হবার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বায়ন, বৈধকরণ ও সহজায়ন ব্যবসা পরিষেবা দ্রুততার সাথে গড়ে তোলা হয়। চীন আরও উঁচুমানের উন্মুক্ত নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে নিজের উন্নয়ন সুপ্তশক্তি ও সুযোগ ভাগাভাগি করে।

“চীনের ব্যবসা পরিবেশ গবেষণা রিপোর্ট—২০২১”অনুযায়ী, ৫০ শতাংশেরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চীনকে বিশ্বের প্রধান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে দেখে। চীনের ব্যবসা পরিবেশ-সংক্রান্ত স্কোর বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য কল্যাণ ভাগাভাগি করা থেকে শুরু করে শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং কার্বন নিরপেক্ষতা বাস্তবায়ন পথ থেকে মেটা-মহাবিশ্বের দূরদর্শী শাসন পর্যন্ত অনেক বিষয়েইসম্প্রতি অনুষ্ঠিত বোআও এশীয় ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে চীন বিশ্বের কাছে আস্থা দৃঢ় করা, সম্প্রীতির সাথে ও একই হৃদয়ে কাজ করা এবং সহযোগিতায় ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করার শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেছে।

চীনের নেয়া“এক অঞ্চল এক পথ”উদ্যোগের কারণে বিশ্ব এবং এর আওতায় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর বাণিজ্যিক পরিমাণ যথাক্রমে ৬.২ ও ৯.৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বিশ্বের আয় বৃদ্ধি ২.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৬ লাখ মানুষ যৌথভাবে“এক অঞ্চল এক পথ”নির্মাণ থেকে চরম এবং ৩২০ লাখ মানুষ মাঝারি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। 

চাইনিজ একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের নির্মাণ শিল্পের আমদানি প্রতি ১০ হাজার মার্কিন ডলার বাড়লেবিশ্বে কর্মসংস্থান গড়ে ২২.৮৪টি বাড়ে। 

ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ছাই ফান মনে করেন, ভবিষ্যতে চীন আরও সক্রিয়ভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় মিশেঅধিকতরউচ্চমানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারীকরণ ও সহজায়ন নীতি কার্যকর করে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সমন্বিত স্বার্থ, পরস্পর নির্ভরশীল অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করবে। (সূত্র: সিএমজি)