ন্যাভিগেশন মেনু

কলাপাড়ায় বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রের ড্রেন ও সড়ক


পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্মিত পূনবার্সন কেন্দ্র-২-এর লালুয়ার মহল্লাপাড়া আবাসন কেন্দ্রে নির্মিত পানি নিস্কাশনের ড্রেন ও সড়কের একাংশ ধসে পড়েছে। 

গত তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে আবাসনের পশ্চিম দিকের প্রায় ৭০ ফুট ড্রেন ও মাটির সড়কসহ আউটার ডাইক ধসে পড়ে। এতে সড়ক সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্মিত পাকা ঘর ধসের আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

তবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে অতিবর্ষণের কারনে কিছু ড্রেন ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা সংস্কার করা হচ্ছে।

পায়রা বন্দর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য কলাপাড়ার মোট তিন হাজার ৪২৩ পরিবারকে সরকার পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কলাপাড়ার মহল্লাপাড়া, মেড়াউপাড়া, হাচনাপাড়া, চান্দুপাড়া, লেমুপাড়া, ধুলাসার ও লোন্দা গ্রামে আবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়।

লালুয়া ইউনিয়নের মহল্লাপাড়ায় ৬৩৬ পরিবারের জন্য নির্মাণ হচ্ছে আবাসন কেন্দ্র। ইতোমধ্যে মহল্লাপাড়া আবাসন কেন্দ্রে ৪০৬ পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবাসন কেন্দ্রের অধিকাংশ ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এই আবাসন নির্মাণের কাজ করছে। আবাসন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে পাকা ঘর, ইটের সলিং রাস্তা, ড্রেন, পানির পাম্প বসানো, বিদ্যুত সংযোগ লাইনের কাজ ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সুসজ্জিত করা হয়েছে তিনতলা বিদ্যালয় ও মসজিদের কাজ।

মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উচ্চতায় বন্যা ও জলোচ্ছাস সহায়ক এ আবাসনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর অধিকাংশ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ঘরে মানুষ উঠে যাওয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আবাসনের অভ্যন্তরে বিরাজ করে হাসি-খুশির পরিবেশ। কেননা গৃহ হারিয়ে এ পরিবারগুলো এতোদিন ছিন্নমূলের মতো জীবনযাপন করছিলো। গত কয়েকদিন ধরে একটানা প্রবল বর্ষণে আবাসনের পশ্চিম দিকের আউটার ডাইকসহ সড়ক ও প্রায় ৭০ ফুট ড্রেন ধসে পড়ে। এতে ধসেপড়া এলাকার পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। বালু ও মাটির বস্তা ফেলে ঘরগুলো ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহল্লাপাড়া আবাসনের চারিদিক ফসলি জমি হওয়ায় গোটা প্রকল্পের বৃষ্টির পানি পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ ড্রেন ও সড়ক ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে তাৎক্ষণিক পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভাঙ্গন ঠেকাতে কাজ শুরু করায় নতুন করে আর ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার এস এম রাজিবুল আহসান বলেন, অতিবর্ষণে কিছু এলাকা ধসে পড়েছে। তবে এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তারা দ্রুতই ধ্বসে পড়া সড়ক ও ড্রেন পুনঃনির্মাণে কাজ শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে কোনও ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে তারা সকল উন্নয়ন কাজ করছেন।

তবে আবাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। বৃষ্টির কারনে ঘরের ছাদ চুইয়ে পানি পড়াসহ মাটি ধসে তাদের বসতঘর ধসে পড়ার আশংকা করছেন। একই সাথে তারাও দ্রুত ধসেপড়া সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের দাবি করছেন। সেই সাথে সকল রাস্তা, ড্রেন ও ঘর যাতে টিকসই হয় সে বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি করার দাবি করছেন প্রশাসনের কাছে।

কলাপাড়ার লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস তপন বলেন, বৃষ্টিতে আবাসন কেন্দ্রের সড়ক ও ড্রেন ধসে পড়ার বিষয়টি তারা তাৎক্ষণিক পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করায় দ্রুতই ধসে পড়া এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে এলাকার মানুষ দ্রুতই আবাসনের কাজ সম্পন্নের দাবি করেন।

এদিকে লালুয়ার মহল্লাপাড়া আবাসন কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রকল্পের ডিডিসহ ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ। এ সময় তারা আবাসনের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেন এবং কোন ধরনের বিভ্রান্ত না হতে আশ্বাস দেন।

এ ব্যাপারে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন আহমেদ খান মুঠোফোনে বলেন, গত কয়েকদিনে পটুয়াখালীতে সবোর্চ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। অতি বৃষ্টিতে কিছু এলাকা ধসে পড়েছে। তবে এতে ভবনের কোনও সমস্যা হয়নি। তিনি দ্রুতই ধসেপড়া স্থান সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একই সাথে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আবাসনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান।

এমকেআর/এসএ/এডিবি/