ন্যাভিগেশন মেনু

বেনাপোলে ধর্নায় বসার ঘোষণা আটকেপড়া ভারতীয়দের


বৈশ্বিক কোভিড-১৯ কারণে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে আটকে থাকা আড়াই হাজার ভারতীয় নাগরিক দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব। স্বদেশে  ঢুকতে না পেরে এবার তারা বনগাঁও সীমান্তের বিপরীতে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে গিয়ে ধর্নায় বসার ঘোষণা দিয়েছেন।

অন্তত আড়াই হাজার ভারতীয় নাগরিক লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন। কেউ ৫ মাস, কেউ ৬ বা তারও বেশি মাস ধরে অপেক্ষা করছেন কবে সীমান্ত খুলবে আর তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন। ঘর-সংসার, আপনজনদের থেকে কোন কারণ ছাড়াই বিচ্ছিন্ন থাকা এসব ভারতীয় নাগরিক এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় থেকে থেকে তারা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশে এসে আটকে রয়েছি, আমরা ফেরার জন্য অধৈর্য হয়ে পড়েছি। আটকেপড়া কয়েকজনের সঙ্গে  যোগাযোগ করে ঠিক করেছি যে এবার বেনাপোল সীমান্তে গিয়ে ধর্নায় বসব আমরা। ২৪ তারিখ ধর্নার দিন ঠিক হয়েছে।

আর কতদিন আমরা এভাবে বিদেশে এসে আটকে থাকব? কেন নিজের দেশেই ঢুকতে পারছি না আমরা? প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা শ্যামল পালের। মার্চ মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন অসুস্থ দিদাকে দেখতে। কিন্তু তারপর আর দেশে ফিরতে পারেননি। ওদিকে দেশে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তবুও ফেরার উপায় নেই।

 এদের কেউ কেউ আবার এসেছিলেন আত্মীয়র বিয়েতে, কেউ অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে, কেউ আবার  এসেছিলেন বাংলাদেশে ঘুরতে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। এরা ভারতে পরিবার পরিজন ছেড়ে বাংলাদেশেই থেকে যেতে বাধ্য হন।

কলকাতার মুক্তি সরখেল রাজশাহীতে আত্মীয়র বাড়িতে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আর খোঁজ রাখছেন যে কবে খুলবে সীমান্ত, কবে ফিরতে পারবেন নিজের দেশে।তিনি বলেন, ভাইপোর বিয়েতে এসেছিলাম মার্চ মাসে। কদিনের ভিসা নিয়ে। তারপরেই লকডাউন শুরু হয়ে গেল, আর আমি এখানেই আটকে গেলাম।

কলকাতায় আমার পরিবার রয়েছে, আর আমি এখানে এক আত্মীয়র বাড়িতে পড়ে আছি। কীভাবে যে ফিরব, কিছুই বুঝতে পারছি না।কোথায় কোন ভারতীয় আটকিয়ে আছেন, সেই খবর যোগাড় করছেন সকলেই। অচেনা অপরিচিতদের সঙ্গেও ফোনে পরিচয় হয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ রাখছেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েও।

দেশের উত্তর জনপদ জেলা নওগাঁয় এক আত্মীয়র বাড়িতে সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন কলকাতার ছবি ব্যানার্জী।কী উদ্বেগের মধ্যে যে দিন কাটছে বলে বোঝানো কঠিন।

আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য হেঁটে বেনাপোল সীমান্ত পেরনো অসম্ভব। হিলি সীমান্ত দিয়ে ফিরতে পারলেই সব থেকে ভাল, বলেন মিসেস ব্যানার্জী। আটকে পড়া ভারতীয়দের একাংশকে ঢাকা থেকে বিমানে করে ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকার। অবশ্য এদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। কিন্তু ঢাকা থেকে দিল্লি গিয়ে তারপর পশ্চিমবঙ্গে ফেরার সেই পথে বিমানের টিকিট কেনার অর্থ অনেকের হাতে নেই।

এমনিতেই বিদেশে দীর্ঘ সময় থাকতে বাধ্য হওয়ায় হাতের টাকা পয়সা শেষ।ছবি ব্যানার্জীর কথায়, ঢাকাতে যেভাবে রোগটা ছড়িয়েছে শুনছি, সাহস হচ্ছে না যে ঢাকা গিয়ে বিমানে চেপে দিল্লি যেতে। আবার সেখান থেকে কলকাতায় কীভাবে পৌঁছাব তাও জানি না।

কিছু একটা ব্যবস্থা করুক সরকার।করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হলে ভারত ও বাংলাদেশ- উভয় অংশেই অনেক ভ্রমণকারী আটকে পড়েন।

কলকাতার ফল ব্যবসায়ী মুহম্মদ কাইয়ুম বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছিলেন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে - দিন পনেরোর জন্য। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হতে চলল তিনি হোটেলে থাকছেন, কখনও বা আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে আসছেন। তার কথায়, এসেছিলাম ১৫ দিনের জন্য, আটকে আছি প্রায় ছয় মাস।

একটা হোটেলে থাকছি, আর আত্মীয়স্বজনরা খাওয়াচ্ছেন। যা টাকাপয়সা নিয়ে এসেছিলাম, তাও প্রায় শেষ। কী অবস্থায় যে আছি, বলার নয়। যেখানে খোঁজ পাচ্ছি যে ভারতীয় কেউ আটকে আছে, তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

অনেকের সঙ্গেই এভাবে যোগাযোগ হয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বলছে, তারাও সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত যাত্রী পারাপার শুরু করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ ব্যাপারে তারা জানিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও না হওয়ায় উদ্বেগের মধ্যেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন কয়েক হাজার ভারতীয় নাগরিক।

এস এস