ন্যাভিগেশন মেনু

বেশি ৪ মারার সুবাদে বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড


সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রুদ্ধশ্বাস বিশ্বকাপ ফাইনালে জয় তুলে নিল ক্রিকেট প্রতিষ্ঠাতা বৃটেন।

তবে ফুটবলে তাও টাইব্রেকারে ড্র হলে সাডেন ডেথের সুযোগ থাকে, ক্রিকেটে কিউয়িরা সেই সুযোগও পেলেন না। ম্যাচ টাই, সুপার ওভারও তাই, শেষ পর্যন্ত ম্যাচে বেশি চার মারার সুবাদে ২০১৯ বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড।

আইসিসি’র অদ্ভুত নিয়মে ম্যাচে কিউয়িদের থেকে ৬টা বেশি চার মারার সুবাদে ম্যাচ জেতে ইংল্যান্ড। ম্যাচ শেষে কিউয়িদের হতাশ মুখ বুঝিয়ে দিচ্ছিল পর পর দু’বার ফাইনালে উঠেও হারের যন্ত্রণা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব চেয়ে রোমহর্ষক ম্যাচ জিতে ২০১৯ বিশ্বকাপে তাদের নাম লিখে নিল ইংরেজরা।

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ম্যাচটির ভাগ্য নির্ধারিত হয় সুপার ওভারে। সুপার ওভারে খেলতে নেমে দুই দলই নিজেদের ৬ বলে করতে পারে সমান ১৫ রান করে। তবে ইনিংসের ষষ্ঠ বলে মার্টিন গাপটিলকে রানআউট করেই উল্লাসে মেতে ওঠে ইংল্যান্ড।

কারণ তাদের জানা ছিলো সুপার ওভারেও টাই হলে শিরোপা উঠবে তাদেরই ঘরে।

সুপার ওভারের নিয়ম অনুযায়ী, যদি এ ৬ বলেও ম্যাচের ফলাফল না হয়, তা হলে যে দল বেশি বাউন্ডারি মেরেছে, সেই দলকেই জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। দু’দলের মারা বাউন্ডারির সংখ্যা দিয়েও যদি ম্যাচের নিষ্পত্তি না হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে? তখন দেখা হবে সুপার ওভারের শেষ বলে কোন দল কত রান করেছে। যে দল বেশি রান করেছে, নিয়ম অনুযায়ী সেই দলই জিতবে।

ফলে মূল ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোয় প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ম্যাচে আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোট বাউন্ডারি পায় ১৬টি। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২২টি চারের সঙ্গে ২টি ছয় মারে ইংল্যান্ড।

ফলে সুপার ওভারের নিয়মানুযায়ী চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। এতে স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুলল ইংলিশরা। স্বাদ পেল প্রথম শিরোপা জয়ের। আর ক্রিকেটবিশ্বে সূচনা হলো নতুন এক অধ্যায়ের।

দেখে নেওয়া যাক ফাইনালে জয়ের কারণগুলি:  

সবুজ পিচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও বিপক্ষে গিয়েছে কিউয়িদের। নিকোলস ও উইলিয়ামসন ফিরে যেতে রানের গতি কমে যায়। ফাইনালের মতো ম্যাচে সেই চাপ যে পরের দিকে বিপদ ডেকে আনে তার সেরা উদাহরণ হয়ে রইল এই ম্যাচ।

গোটা ম্যাচে প্রচুর ডট বল খেলেন নিকোলস, উইলিয়ামসন, টেলররা। এখনকার টি-২০ যুগে রান তোলাটাই শেষ কথা। সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয় এই ডট বলের উপরেই। সেটারই অভাব ছিল কিউয়ি ব্যাটিং-এ।

ইংল্যান্ডের চার পেসার চাপ বজায় রেখে যান পুরো ম্যাচ জুড়ে। তিনটি করে উইকেট তুলে নেন ওকস ও প্লাঙ্কেট। যোগ্য সঙ্গত দেয় আর্চার ও উড। তাঁরা স্পিড ব্রেকার ছড়িয়ে রাখেন কিউয়িদের রানের গতি কমাতে।

ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-এর শুরুতেও দুর্দান্ত বল করেন হেনরি-ফার্গুসনরা। কিন্তু এক কিউয়ির হাত ধরেই বিপদ থেকে উদ্ধার পায় ইংরেজরা। মিডল অর্ডারে ম্যাচের সেরা বেন স্টোকস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁকে সঙ্গ দেন বাটলার।

বাটলার ফিরে গেলেও শেষ অবধি ছিলেন স্টোকস। তাঁর হাত ধরেই শেষ ওভারে ১৪ রান তুলে ম্যাচ ড্র করে ইংল্যান্ড। রানের গতি কমতে দেননি স্টোকস। তবে শেষ দিকে নিশামের গতি সামলাতে না পেরে চাপে পড়ে যান টেলএন্ডাররা।

ইংল্যান্ডের গভীর ব্যাটিংলাইন আপ এক বড় কারণ এই ম্যাচে জয়ের। ১০ বলে ১০ করে প্লাঙ্কেট স্ট্রাইক রোটেট করার কাজ করতে থাকেন নিয়মিত। যা সুবিধা করে দেয় বেন স্টোকসকে। যদিও সেখানে ম্যাচ শেষ করতে পারেননি স্টোকস।

ইংল্যান্ডের জয়ের কারণ লিখতে গেলে তাদের ভাগ্যকে বোধহয় বাদ দেওয়া যাবে না। অথবা বলতে হয় কিউয়িদের দুর্ভাগ্যের কথাও। না হলে শেষ ওভারে ডিপ মিড উইকেট থেকে গাপ্তিলের ছোড়া বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে চারে চলে যাওয়ার আর কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে।

বৃটেন ও নিউজিল্যান্ডের  অসাধারণ ক্রিকেটীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ উদাহরণ হয়ে রইল বিশ্বকাপ ফাইনাল। জিততে পারত যে কেউ। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা ছিলেন ইংল্যান্ডের পক্ষে। সুপার ওভারে ইংল্যান্ডকে যখন প্রায় বেঁধে রেখেছেন বোল্ট, তখন শেষ বলটা ঠিক জায়গায় রাখতে পারলে কাজটা সহজ হত কিউয়িদের। কিন্তু ফুলটস দিলেন তিনি, বল বাউন্ডারি পার করে দেন বাটলার।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাঁচ বলে ১৩ রান তুলে নেন নিশাম। শেষ বলে খেলতে আসেন গাপ্তিল। কিন্তু ভাগ্যের নিদারুন পরিহাস। যাঁর থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়, সেই গাপ্তিল রান আউট হয়ে যান দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে।


এসএস