ন্যাভিগেশন মেনু

বৈরি পরিবেশে এলো নববর্ষ, শপথ হোক অশুভশক্তিকে পরাস্ত করা


করোনার নখড় আঁচড়ে যখন বিশ্ব কম্পমান, তার মাঝে হাজির হলো বাঙালির প্রিয় নববর্ষ- পয়লা বৈশাখ। এমন এক বৈরি পরিবেশে বাঙালী আজ আর প্রকাশ্যে খোলা মাঠে মাঠে-ময়দানে উৎসবে যোগ দিতে পারছে না।

তবে নববর্ষের ধর্মই হলো সকল অশুড়, অমানবিক অশু অপশক্তিকে হটিয়ে দিয়ে মানুষের মনে সুখ-শান্তি-প্রশান্তি এনে দেওয়া।আমাদের আজ শপথ হবে- অশুভ করোনাকে পরাস্ত করার জন্য লকডাউনসহ সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলা।

আমাদের আজ নববর্ষের কাছে প্রার্থণা হবে অশুড়শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্ববাসীর ঘরে ঘরে আগের মতো ফিরে আসুক সুখ-শান্তির সুবাতাস।

আজ মঙ্গলবার ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। পয়লা বৈশাখ। কিন্তু প্রতি বছরের মতো বাঙালীর বর্ষবরণের মহোৎসবটি এবার আর উদযাপনের সুযোগ নেই।

বিশ্বজুড়ে হানা দিয়েছে অশুভ শক্তি নভেলা করোনাভাইরাস। অথচ বিশেষ এই দিনটিতে  হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আলোয় এবার বাঙালীর নতুন করে জেগে ওঠার সুযোগে থাবা বসিয়েছে খলনায়ক করোনা।

তবে এ বছর বাঙালী ঘরের বাইরে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে হাতে হাত ধরে না হোক অন্তত: ঘরের ভেতর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলে তাঁর নিজস্ব ঐতিহ্যের শেকড়ের শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে।

নববর্ষ নতুন সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের দ্বারে হাজির হয়।শভ্রতার প্রত্যাশায় মানুষ সুস্বাগতম জানায়।প্রভাতের প্রথম আলোয় বরণ করে নতুন বছরকে। কেননা তা নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন।

প্রতি বছর ঢাকার রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান থেকে জন্ম নিয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। কিন্তু এবার তা থাকছে অনুপস্থিত।

এ বছর ছেলে তার বাবার কাঁধে উঠে,  প্রাণপ্রিয় স্ত্রী তাঁর স্বামীর হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ নেই। আড়ম্বরপূর্ণ না হোক, অন্তত ঘরেই নিজেদের আয়োজনে উদযাপন করতে হবে নববর্ষ।

বাঙালীর নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। চিরাচরিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে পয়লা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠার দিন।

কিন্তু আজ দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানে গানে গানে, আনন্দ আয়োজনে নতুন বছরটিকে বরণ করে নেওযার সুযোগ নেই বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষেরও।

বাঙালীর গর্ব ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার তাও থাকবে অনুপস্থিত।

করোনা হানার মধ্যেও তারপরেও বছর শুরুর এই শুভক্ষণে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। বাঙলীর নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির।

বাংলা সাল প্রবর্তন করেছিলেন সম্রাট আকবর। তার আমলে প্রবর্তন হয় বাংলা সন, বঙ্গাব্দ। বঙ্গাব্দের মাস হিসেবে বৈশাখের প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাস অবশ্য বেশি দিনের না হলেও, আদি সাহিত্যেও বৈশাখের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

দক্ষের ২৭ কন্যার মধ্যে অনন্য সুন্দরী অথচ খর তাপময় মেজাজ সম্পন্ন একজনের নাম বিশাখা। এই বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারেই বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখের নামকরণ। সৌরমতে বৈদিক যুগে বছর গণনার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। সেখানেও সন্ধান মেলে বৈশাখের।

পেছনের যত ক্ষত ভুলে এ সময় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে বাঙালী। শুভ সূচনা হয় পয়লা বৈশাখে।

আর আমাদের পরম গর্ব বিশ্বকবিগুরুর ভাষায়

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা...। পুরনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে নতুন বছর।

বৈশ্বিক করোনার নখড় থাবার মধ্যেও দুই হাতে অন্ধকার ঠেলে, সব ভয়কে জয় করার ভরসায় নতুন করে জেগে উঠবে বাঙালী।

তাই তো আগের মতোই ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের মানুষ আজ একাত্মা হয়ে গাইবে

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ ...।

আবহমান কাল ধরেই চলেছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব।

বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কিষান-কিষানী। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হন নতুন বছরে প্রবেশের জন্য।  বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা।

ধর্ম-বর্ণ ভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। নববর্ষের প্রথম দিবসটি  বাঙালীর জাতিসত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে গভীরভাবে বিরাজ করে। সেই শক্তি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।

বিশ্বজুড়ে বিরুপ পরিবেশের কারনে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সন্ধ্যায় পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ আহবান জানান তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালি আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করে থাকেন।

এ বছর বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে পয়লা বৈশাখের বহিরাঙ্গণের সকল অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশে ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। এবার সবাইকে অনুরোধ করবো কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন।

আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দের নববর্ষের শুভেচ্ছা। দেশে-বিদেশে যে যেখানেই আছেন সবাইকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন।




লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, আজকের বাংলাদেশ পোস্ট

এস এস