ন্যাভিগেশন মেনু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

'চট্টগ্রামের সকল থানা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে জেলা প্রশাসন'


চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, জনজীবন স্বাভাবিক করে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনায় আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ১৭টি ও মহানগরের ১৬টিসহ মোট ৩৩টি থানা রয়েছে। আমরা যদি অন্তত থানা প্রতি ৫ জন স্বেচ্ছাসেবক পাই, তবে ধীরে ধীরে থানাগুলোতে স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। 

শনিবার বিকালে সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে জেলা প্রশাসন মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

এসময় ট্রাফিক কাজের সুবিধার জন্য জেলা প্রশাসক থেকে আপাতত ক্যাপ ৫০০ টি, বাঁশি ৫০০ টি, লাঠি ৫০ টি, ছাতা ২০০ টি, লেজার লাইট ২৫০ টি, পানি ২০০ বোতল ও যাতায়াত জন্য ৩টি গাড়ি দেওয়া হয়েছে।

এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের সর্বমোট ৩৩টি থানার পাশাপাশি উপজেলা পরিষদসমূহ, কোর্ট বিল্ডিং-সংলগ্ন এলাকা, ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহে, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ অফিসসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। 

সভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা ও মহানগরের জন্য ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে জেলা প্রশাসনের তিনজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসাথে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে বাজার মনিটরিং-এ দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট, অভিযোগ গ্রহণে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং লস্ট এন্ড ফাউন্ড টিমে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গৃহীত কার্যক্রমসমূহের সফল বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন নির্ধারণ করে সে মোতাবেক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। 

 বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ পুলিশ নয়, আমাদের প্রতিপক্ষ সকল ফ্যাসিস্টরা। জনজীবন স্বাভাবিক করতে ছাত্রদের সাথে জেলা প্রশাসনের সমন্বয় খুবই জরুরী। 

এসময় তিনি ট্রাফিক কন্ট্রোলে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট এবং স্কাউটদের সাথে শিক্ষার্থীরা সমন্বয় করে কাজ করবে বলে জানান।
 সভায় কুইক রেসপন্স টিম গঠনের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু পুলিশ নেই, সেজন্য সবার আগে থানার নিরাপত্তা দরকার। পুলিশের মনোবল ফিরানোর জন্য থানায় নিরাপত্তা আনা জরুরী। প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রশাসন সাথে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় মাধ্যমে কাজ করতেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে উপজেলাতে যেতে হবে, সেজন্য আপনাদের একটা লিস্ট দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসক সমন্বয়ে ছাত্রদের ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করতে হবে, এতে কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া যাবে। নগরের ট্রাফিকের কাজে রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, ভলান্টিয়ার সাথে সমন্বয় মাধ্যমে কাজ করা হবে। এতে ছাত্রদেরও একটি অংশ কাজ করবে। উপজেলাউ ছাত্রদের মাধ্যমে যারা কাজ করবে, তাদের যাতায়াত সুবিধার্থে তিনটি গাড়ি দেয়া হবে। আমাদের লোকবল নেই, সেজন্য আপনাদের থেকে লোকবল নিতে হবে। 

তিনি বলেন, লোহাগাড়াসহ পাঁচটি থানায় পুলিশ আসেনি, সেজন্য সকলকে সহযোগিতা দিতে হবে। উপজেলা পরিষদগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ রের্কডগুলো থাকে, সেগুলোতে ভূমি রের্কড থাকে। সেখানে নিরাপত্তা জন্য কাজ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে সমন্বয় করে ওখানে কাজ করতে হবে। শহরে ডাকাতি করতে না পারলেও গ্রামে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও রের্কডপত্র থাকে, এখানে আপনাদের ভিজিল্যান্স টিম থাকতে হবে। বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনে ছাত্রদের সার্পোট লাগবে। যাতে তারা অফিসে নির্ভয়ে যেতে পারে। কারাগারে ৬ হাজার বেশি বন্দি আছে, স্পর্শকতার জায়গা হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তায় বেশি দরকার। 
ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা দিবেন, যাধ্যমত সহায়তা করা হবে জানান তিনি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা জানান, যাদের সাথে অতীতে জায়গা-জমি দ্বন্ধ, রাজনীতি সমস্যা ছিল, তারা এখন অপরাধমূলক কাজ করছে। সাম্প্রদায়িক বিরোধ-গুজব প্রতিরোধ, নিরাপত্তা সেল, বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয়, আমলাতান্ত্রিন জটিলতা, অবৈধ অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার, নতুন কারিকুলাম বা পুরাতন কারিকুলামে শিক্ষা চলবে কিনা সে বিষয়ে স্পট ধারণা, এইচএসসি পরীক্ষা দ্রুত শুরু করা, ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাস্পাস গড়তে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া।

তারা জানায়, রাতে পাহাড়াদার ব্যবস্থা করা, যাতে দুস্কৃতিকারীরা সুযোগ না পায়। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রেড ক্রিসেন্ট ও বিএনসিসি মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হোক। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল হোক, পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়া জন্য ছাত্রদের সমন্বয় করা হোক, দেশ গঠনে পুলিশকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে, তাদের সহযোগিতা করা। ছাত্রদের আন্দোলনে জড়িত পুলিশের সেসকল অফিসারগন জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক, হটলাইন নাম্বার চালু করা। 

কোন রাজনৈতিক দলকে যাতে আমাদের কাজ সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী বা সাধারণ জনতা যেসব শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা। গুজব প্রতিরোধে দক্ষ সাংবাদিক দিয়ে ফ্যাক্ট চেকিং তৈরি করা। যানবাহনে ভাড়া নিয়ে বৈষম্য দূর করা। রাউজানে চাঁদাবাজি দ্রুত বেড়ে গেছে, ওদিকে নজর দেয়া। খাতুনগঞ্জ বাজার সিন্ডিকেট, পাহাড়তলী ও ফিশিরিঘাটে মাছের সিন্ডিকেট বন্ধ করা।

ট্রাফিকের কাজে ট্রেনিং ব্যবস্থা, পুলিশের থানা ভিত্তিক ইউনিটগুলোতে রদবদল, সমন্বয়দের জন্য জ্যাকেট বা কোন পরিচিতি দেওয়া, এত কাজ করতে সুবিধা হবে। কারাগারর হামলাকারী অনেক আসামীরা বের হয়ে গেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা। মাদকের ব্যবহার প্রতিরোধ করা।
 
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাকিব হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক এবং শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সাদিউর রহিম জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ। এরূপ সভা সপ্তাহে অন্তত একবার করার ব্যাপারে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।