ন্যাভিগেশন মেনু

ব্রিক্স সম্মেলনে যৌথভাবে মহামারি মোকাবিলার আহ্বান সি চিন পিংয়ের


ব্রিক্সের দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলন ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘পরস্পরকে সমর্থন ও রক্ষা, যৌথভাবে করোনা মহামারি প্রতিরোধ এবং হাতে হাত রেখে সহযোগিতা জোরদারকরণ’ শীর্ষক ভাষণ দেন। 

ভাষণে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ব্রিক্সের পাঁচটি সদস্যদেশের উচিত বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকা, ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা, উন্মুক্তভাবে উদ্ভাবন করা, জনগণের জীবনযাপনকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন নিশ্চিত করা, পরস্পরকে সমর্থন ও রক্ষা করে যৌথভাবে করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলা করা, এবং হাতে হাত রেখে যৌথভাবে সহযোগিতার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া। 

সম্মেলনে ‘ব্রিক্সের দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলনের মস্কো ঘোষণা’ গৃহীত হয়। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসা এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর মেসিয়াস বলসোনারোও সম্মেলনে  যোগ দেন। 

সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহামারি ও বিশ্বের শত বছরের বৃহত্তম পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক কাঠামোতে গভীর পরিবর্তন ঘটছে। মানবজাতি এখন শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর মহামারি মোকাবিলা করছে। বিশ্বের অর্থনীতি গত শতাব্দীর অর্থনীতির মন্দার পর সবচেয়ে গুরুতর হ্রাসের আশঙ্কায় পড়েছে। এমন অবস্থায় এবারের সম্মেলনের আয়োজন খুব তাৎপর্যপূর্ণ। 

সি চিন পিং বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি ও উন্নয়নের যুগের মূল চেতনা পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বের বহুমেরুকরণ এবং অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রবণতাও পরিবর্তিত হবে না। আমাদের উচিত জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে, মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভাগ্যের সম্প্রদায় সৃষ্টির চেতনায় বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য নিজ নিজ অবদান রাখা।”

তিনি বলেন, প্রথমত, বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকতে হবে। বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা রক্ষা করা, জাতিসংঘ সনদকে রক্ষা করা, জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করা, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা, পরস্পরের সামাজিক ব্যবস্থা, অর্থনীতির কাঠামো ও উন্নয়নের পথকে সম্মান করা, একে অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা, একতরফা শাস্তির বিরোধিতা করা, এবং যৌথভাবে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন-পরিবেশ সৃষ্টি করা। 

দ্বিতীয়ত, যৌথভাবে করোনাভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। চীন ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর চাহিদা বিবেচনা করে সেসব দেশে টিকা সরবরাহের কথা বিবেচনা করবে।

“তৃতীয়ত, আমাদের উচিত মানুষ ও পণ্যের আন্তঃদেশীয় বিনিময় ও পরিবহনের পথে বাধা দূর করা, শিল্পচেইন ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মহামারির অজুহাতে বিশ্বায়নবিরোধী তৎপরতা কেবল বিভিন্ন দেশের অভিন্ন স্বার্থের  ক্ষতি করবে। দৃঢ়ভাবে উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে সংরক্ষণবাদী আচরণের বিরোধিতা করতে হবে। বিজ্ঞানের উদ্ভাবন ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে; উন্মুক্ত, ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন বাণিজ্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। চীন ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়া মেন শহরে ব্রিক্স দেশগুলোর নতুন শিল্প বিপ্লব অংশীদারি সম্পর্কের উদ্ভাবন বেস স্থাপন করবে। আশা করা যায়, ব্রিক্স দেশগুলো চীনের উত্থাপিত ‘বিশ্বের সূচকের নিরাপত্তা উদ্যোগ’কে সমর্থন করবে।” 

“চতুর্থত, ‘জাতিসংঘের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি’কে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার কেন্দ্রে রাখতে হবে। দারিদ্র্যমুক্তিকে শীর্ষ কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে; দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পদের বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

“পঞ্চমত, সবুজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নে অবিচল থাকতে হবে। চীন প্রতিশ্রুতি দেয় যে, ২০৩০ সালের আগে চীনের কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ শীর্ষে পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের আগে কার্বনমুক্ত উন্নয়ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাবে।”

সবশেষে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, “আমরা সবাই একই জাহাজে আছি। যখন বাতাস প্রচুর ও ঢেউ বড়, তখন আমাদের উচিত আরো ভালোভাবে সামনে যাওয়ার দিক নির্ধারণ করা, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব জটিলতাকে পরাজিত করে আরো সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।”

পাঁচটি দেশের নেতারা ‘বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা, অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবনে অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে মহামারি মোকাবিলা, ব্রিক্সের উন্নয়ন ও সহযোগিতা, এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময় করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছান। নেতারা বলেন, পাঁচটি দেশের উচিত টিকা ও ওষুধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা, মহামারিকে রাজনীতিকরণের বিরোধিতা করা, বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও  প্রবৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালানো, বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতাকে সমান করা। নেতারা একমত হয়ন যে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকবে, জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নেতৃত্বে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করবে, এবং মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের সম্প্রদায় গড়ে তোলার কাজে গতি সঞ্চার করবে। 

-    শুয়েন ফেই ফেই, চায়না মিডিয়া গ্রুপ