ন্যাভিগেশন মেনু

ভরা মৌসুমেও মিলছেনা ইলিশ, হতাশায় জেলেরা


পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না ইলিশের। অন্যান্য বছর এ সময়ে এলাকার মাছের বাজারে রুপালি ইলিশের ছড়াছড়ি থাকলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন।

মির্জাগঞ্জ উপজেলায় সরকারি নিবন্ধিত ২ হাজার ১৬ জন জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে কয়েক শত, যাদের সংসার চলে ইলিশ মাছ ধরে। মাছ শিকারের আশায় প্রতিদিন জেলেরা জাল, ট্রলার ও নৌকাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েন পায়রা নদীতে।

তবে এ বছর ভরা মৌসুম শুরু হলেও জালে মাছ ধরা পড়ছে না বললেই চলে। মাঝে মাঝে দেখা মিললেও তাতে নৌকার খরচ ওঠানোই সম্ভব হয় না। জেলেদের কাছে টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে আড়ৎদাররাও। একদিকে নদীতে মিলছে না ইলিশ, অন্যদিকে করোনা ও লকডাউনের কারনে অন্য কাজও বন্ধ। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলেরা।

পায়রা নদী সংলগ্ন পায়রাকুঞ্জ এলাকার জেলে মোসারেফ আকন, সোহরাব ফকির ও পুর্ব মির্জাগঞ্জ গ্রামের মালেক সিকদার জানান, তাদের একমাত্র পেশা ইলিশ ধরে বিক্রি করা এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সংসার চালানো। জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এই সময়ে মাছ ধরেই তারা সারাবছরের আয়-রোজগার করে থাকেন।

তাই তাঁরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই ইলিশ ধরতে নদীতে যেতে চান না। বেশির ভাগ জেলে আবার ব্যাংক ও এনজিও ঋণের কিস্তির ভয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

জেলেরা আরও বলেন, এতদিন নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো এবং লকডাউনের মধ্যে আমরা অন্য কোন কাজও করতে পারি নাই। সরকারিভাবে যে সাহায্য পেয়েছি তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এখন আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোয় তেমন ইলিশ নেই। এদিকে নদীতে যে সামান্য ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে, তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে পায়রাকুঞ্জ মইন উদ্দিন মৎস্য আড়ৎ এর প্রোপ্রারাইটর শাহ কামাল ফকির বলেন, গতবছর এ দিনে দৈনিক ২-৩ মণ মাছ আড়ৎ এ আসতো। আর এখন দৈনিক ১০ কেজি মাছও আসে না। আর মাছ কম পাওয়ার কারনেই দাম একটু বেশি। মাছ বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। কিন্তু নদীতে মাছের যে অবস্থা তাতে মনে হয় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ তানজিমুল ইসলাম বলেন, এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও অবৈধ বেহুন্দী জালের মাধ্যমে পোনা মাছ নিধন, নদীতে বড় বড় চর জেগে ওঠা ও নদীর মুখ মরে যাওয়ার কারনে ইলিশ মাছ অবাধে যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে ইলিশের প্রজনন কম হচ্ছে। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পায়রা নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।

এম এ আর এস/এমআইআর/ওআ