ন্যাভিগেশন মেনু

ভারতে মা-মেয়ে পাচারের মূলহোতা কাল্লুসহ গ্রেপ্তার ৩


রাজধানীর মিরপুরে খুশি নামের এক তরুণীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচারের পর অনৈতিক কাজ করানোর খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধারে তরুণীর মা নিজেও ভারতে পাচার হন।

এ ঘটনায় পাচারকারী চক্রের মূলহোতা কাল্লু ও নাগীন সোহাগসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সোমবার (১৬ আগস্ট) র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আজ দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

প্রসঙ্গত, বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত জানুয়ারিতে ১৭ বছরের এক তরুণীকে ভারতে নিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয় একটি মানবপাচারকারী চক্র। একদিন হঠাৎ পরিবারের কাছে ফোন করে ওই তরুণী তাকে বাঁচানোর আকুতি জানায়।

জানা গেছে, মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিল পাচার হওয়া ওই তরুণী। মা-বাবা ও চার ভাইবোনের সংসার তাদের। বাবা গাড়িচালকের সহকারী। অভাব-অনটনের সংসার। মাস ছয়েক আগে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা টার্গেট করে ওই তরুণীকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে ভারতে নেয়। বিনা পাসপোর্টে সাতক্ষীরা হয়ে সীমান্ত পার করা হয় তাকে। এরপর বিহারের পাশে কিশোরগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার একটি পতিতালয়ে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই তরুণীকে ফাঁদে ফেলাদের মধ্যে একজন প্রতি মাসে ঢাকায় তরুণীর পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়ে বলত 'ভারতে খুব ভালো আছে সে।' চাকরি করে টাকাও কামাচ্ছে।

তবে ওই তরুণী ভারতে পৌঁছার মাস খানেক পর ফোন করে তার ভয়ংকর জীবন কাহিনি পরিবারকে জানায়। এর পরই তার মা সিদ্ধান্ত নেন, পাচারকারীদের কাছে কৌশলে নিজেকে বিক্রি করে ভারত পর্যন্ত পৌঁছে যে কোনো মূল্যে মেয়েকে উদ্ধার করবেন।

তরুণীর মা একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রথমে তার ধারণা ছিল, একই পাচারকারী চক্রের হাত ধরে পাচার হওয়ায় হয়তো মেয়ে যে জায়গায় রয়েছে, সেখানে তাকেও নেওয়া হবে। তাকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ভারতীয় চক্রের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে তাকে নেওয়া হয় দিল্লিতে। সেখানে মিঠু নামে একজনের কাছে নিশ্চিত হন, তার মেয়ে বিহারের কাছাকাছি পাঞ্জিপাড়ায় রয়েছে। এরপর দিল্লির বাসা থেকে পালিয়ে পাঞ্জিপাড়া পর্যন্ত পৌঁছেন তিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখানকার এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন। তার কাছে নিজের ও মেয়ের জীবনের পুরো কাহিনি বলেন। ওই চেয়ারম্যান তার মেয়েকে উদ্ধার করতে সহায়তা করেন।

মেয়েকে উদ্ধারের পর জুনের শেষে দেশের উদ্দেশে রওনা হন তারা। ঝিনাইদহ সীমান্তে আসার পর তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের কাছেও পুরো ঘটনা খুলে বলেন ওই মা। এরপর বিষয়টি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অবহিত করা হয়। পরে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর মা-মেয়েকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবি তাদের মহেশখালী থানায় হস্তান্তর করে। ঝিনাইদহ সরকারি কলেজে ১৪ দিন মা-মেয়ে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ঈদুল আজহার তিন দিন আগে তারা মিরপুরের বাসায় ফেরেন।

এস এ/এডিবি/