ন্যাভিগেশন মেনু

ভুল ও বিপজ্জনক পথে যুক্তরাষ্ট্রের আর এগোনো উচিত নয়


এ বছরের সালের শেষ দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ‘আগুন’ নিয়ে খেলতে শুরু করেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট ফর ফিসকাল ২০২৩ (এনডিএএ) স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করেছেন। এ বিলে চীনের মুখে কালিমা লেপন করার এবং আক্রমণ করার প্রচুর বিষয়বস্তু রয়েছে এবং এমনকি ‘স্বাধীন তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে গুরুতর ভুল সংকেতও পাঠানো হয়েছে।

এনডিএএ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইন, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা উচিত। তবে, এটি আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করে এবংসত্যকে উপেক্ষা করে ‘চীনের হুমকি’ অতিরঞ্জকরে এবং প্রকাশ্যে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। বিশেষ করেবিলটি তাইওয়ান ইস্যুতে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছে। এতেদাবি করা হয়েছে যে,৫ বছরের মধ্যে মার্কিন সরকার চীনের তাইওয়ান অঞ্চলকে ১০বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘সামরিক সহায়তা’এবং ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘সামরিক ঋণ’প্রদান করবে। পাশাপাশি, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বেগবান করার ঘোষণাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণ স্বাধীন তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির হাতে ছুরি ও বন্দুক হস্তান্তর করার সমান। তাইওয়ান প্রণালীর দু’পারের মধ্যে সংঘর্ষে উস্কানি দেয় এবং তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতিতে অগ্নিশিখায় ইন্ধন জোগায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ধ্বংসকারী এবং তাইওয়ান প্রণালীতে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টিকারী।

১৯৭২ বাহাত্তর সালের ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শাংহাই ইস্তাহার’ থেকে ১৯৭৮ আটাত্তর সালের‘ চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ইস্তাহার’এবং তারপর ১৯৮২বিরাশি সালের‘১৭ আগস্ট ইস্তাহার’পর্যন্তসব দ্বিপাক্ষিক দলিলে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছেযে,বিশ্বে শুধুমাত্র একটি চীন আছে, এবং তাইওয়ান চীনের একটি অংশ। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার হলো চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। ‘১৭ অগাস্ট ইস্তাহারে’ স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির দীর্ঘমেয়াদী নীতি অনুসরণ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে এবং অবশেষে এই সমস্যার সমাধান করবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি মানেনি, বরং আরও জোরদার করেছে।

মাত্র অর্ধ মাস আগেবাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার দুই বছরে তাইওয়ানের কাছে তার সপ্তম অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে।  এনডিএএ-তে তাইওয়ানের সামরিক সাহায্য বাড়ানোর মতো নেতিবাচক বিষয়বস্তুও রয়েছে। এগুলো এক-চীন নীতি এবংচীন-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ ইস্তাহারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির গুরুতর লঙ্ঘন। তাতে কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদের একাধিক চক্রান্ত সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হয়েছে।

তাইওয়ান দ্বীপের কিছু জনমত এই যে, তাইওয়ানের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি তাইওয়ানের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, বরং তাইওয়ানকে একটি দীর্ঘমেয়াদী নগদ মেশিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্যাদা হিসেবে বিবেচনা করা, যা তাইওয়ানবাসীদের করুণ অবস্থায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

একই সময়ে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো একদিকে সংলাপ চালানো, অন্যদিকে দমন করার প্রতি দ্বিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে। গত মাসে বালিতে চীন ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীন স্পষ্ট করে বলেছে যে,তাইওয়ান ইস্যু চীনের মূল স্বার্থের মূল, চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি এবং দু’পক্ষের  মধ্যে প্রথম অনতিক্রম্য লাল রেখা। জবাবে বাইডেন ‘দুই চীন’ বা ‘এক চীন ও একটি তাইওয়ান’ সমর্থন করেন না বলেএ জানিয়েছেন। চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার ইচ্ছা নেই, চীনের উন্নয়নে বাধা দেয়ার ইচ্ছাও নেই, এমন অবস্থানও পুনরায় নিশ্চিত করেছেন বাইডেন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি কাজ হলো বালি দ্বীপে প্রেসিডেন্টদ্বয়ের মতৈক্য থেকে বাস্তব নীতিমালা ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপে রূপান্তর করা। সিএমজির এক সম্পাদকীয় এ মন্তব্যকরা হয়।

তাইওয়ান চীনের তাইওয়ান, এবং তাইওয়ান সমস্যার সমাধান চীনা জনগণের নিজস্ব ব্যাপার, যা কোনো বিদেশী হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয় না। গত ২৫ ডিসেম্বর চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড তাইওয়ান দ্বীপের চারপাশে সমুদ্র এবং আকাশপথে সমস্ত পরিষেবা ও অস্ত্রের যৌথ যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল এবং যৌথ ফায়ার স্ট্রাইক মহড়ার আয়োজন করে। এটি বর্তমান মার্কিন-তাইওয়ানের উত্তেজনা এবং উস্কানির একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া। মার্কিন পক্ষের প্রাসঙ্গিক বিলগুলোতে চীন-সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত নয় এবং ভুল ও বিপজ্জনক পথে আরও দূরে যাওয়া উচিত নয়। বরং এক-চীন নীতি এবং চীন-মার্কিন তিনটি যৌথ ইস্তাহারে ফিরে আসা উচিত। নিজের  ইচ্ছা মতে ভুল পথে জেদ করলে তারা নিজেকে পুড়িয়ে ফেলবে বলে মনে করে সিএমজি সম্পাদকীয়। - সূত্র: সিএমজি