যুক্তরাষ্ট্রর মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে তারা প্রথমবারের মতো মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে সফলভাবে একটি ছোট ড্রোন ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। ইনজেনুয়িটি নামের এই ড্রোনটি মঙ্গলের আকাশে ৪০ সেকেন্ডের মতো ওড়ে। এটিই অন্য গ্রহে প্রথম যন্ত্রচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত কোন যান।
মঙ্গলগ্রহ থেকে একটি উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠানো তথ্যে এই খবর পৌঁছেছে।
ড্রোনটি ওড়ার ছবি নাসার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছানোর পর কর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েতে দেখা যায়। মাত্র এক দশমিক আট কেজি ওজনের হেলিকপ্টারটি মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে উড়ে ৪০ সেকেন্ড পর সফলভাবে অবতরণ করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইনজেনুয়িটি ড্রোনটির প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা পরীক্ষা করার পর এটিকে এখন তারা আরও উঁচুতে এবং আরও দূর পর্যন্ত ওড়াতে চান। নাসা বলছে এই সাফল্য সামনের দিনগুলোতে আরও দুঃসাহসিক বিমান ওড়ানোর পথ প্রশস্ত করলো।
নাসার পারসিভেয়ারেন্স রোভার যান এই ড্রোনটি বহন করে মঙ্গলে নিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই পারসিভেয়ারেন্স মঙ্গলের পৃষ্ঠে জেযেরো গহ্বরে অবতরণ করে। আশা করা হচ্ছে, এরকম ড্রোন দিয়ে এরপর থেকে মঙ্গল বা অন্য কোনো গ্রহের ভূ-প্রকৃতি এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণ অনেক সহজ হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার এক গবেষণাগারে ইনজেনুয়িটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মিমি অং বলেন, 'আমরা এখন বলতে পারি, মানুষ আরেকটি গ্রহের আকাশে ড্রোন জাতীয় আকাশ যান উড়িয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করেছি মঙ্গলের আকাশে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম উড়োজাহাজ ওড়ানোর মতো মুহূর্ত কবে আসবে, আজ আমরা সেই মুহূর্তে পৌঁছতে পারলাম।''
দু্ই ভাই উইলবার রাইট আর অরভিল রাইট ১৯০৩ সালে পৃথিবীর আকাশে প্রথম শক্তি-চালিত উড়োজাহাজ নিয়ে উড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। এটাকে সেরকমই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
রাইট ভাইদের প্রথম সফল ফ্লাইট আকাশে উড়েছিল মাত্র ১২ সেকেন্ডের জন্য
মঙ্গলের মাটি থেকে কোন বায়ুযান গ্রহটির আকাশে ওড়ানো সহজ নয়। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের মাত্র ১ শতাংশ ঘনত্ব গ্রহটির বায়ুমণ্ডলেরঅ এর ফলে কোন পাখাওয়ালা যানের জন্য বাতাস কেটে খুব বেশি ওপরে ওঠা খুবই কঠিন। মঙ্গলগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কিছুটা সাহায্য করে, তবে মাটি থেকে এধরনের ড্রোন বা হেলিকপ্টার মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে তোলার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়।
নাসা ঘোষণা করেছে যে মঙ্গলগ্রহের জেযেরো গহ্বরের যে জায়গায় পারসিভেয়ারেন্স নভোযান, ইনজেনুয়িটি ড্রোনটিকে নামায় সেই জায়গাটিকে এখন থেকে 'রাইট ভাইদের অবতরণক্ষেত্র' নাম দেওয়া হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রথম উড্ডয়ন সফল হবার পর আগামী দিনগুলোতে তারা আরও চারটি ফ্লাইট ওড়ানোর চেষ্টা করবেন। প্রতিটি ফ্লাইটে হেলিকপ্টারটিকে একটু একটু করে বেশি দূর পর্যন্ত ওড়ানো হবে।
এডিবি/
