ন্যাভিগেশন মেনু

মর্ত্যবাসীর প্রতি আর্শীবাদ রেখে কৈলাশে ফিরে গেলেন মা ‘উমা’


আজ মঙ্গলবার সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। সনাতন হিন্দু বিশ্বাসে-বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফিরে গেলেন কৈলাশে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।

‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দূর কৈলাশ ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসেন ঘোটকে চড়ে। আজ বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেন আবারও ঘোটকে।

আজ শুভ বিজয়া দশমী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে প্রতিটা উৎসব-পার্বণ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবে সেটি আবার প্রমাণিত হল।

বাংলাদেশে এবছরের দুর্গাপুজোর পরিসংখ্যাণ চমকে দিয়েছে। পরিসংখ্যাণ বলছে এবছর বাংলাদেশে পুজোর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগিতাতেই।

বাংলাদেশে এবছর দুর্গাপুজো হয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৮টি। তার মধ্যে প্রথমবার পুজো হচ্ছে মোট ৪৮৩টি। অর্থাৎ নতুন করে এবছর ৪৮৩টি দুর্গাপুজো হলো। যা সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য খুব ভাল খবর।এর আগে বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি ভাঙার প্রবণতাও দেখা গিয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবছর পুজো বাড়াটা ছিল বেশ আশাপ্রদ।

বাংলাদেশ পুজো উদযাপন কমিটিও পুজোর সংখ্যা বাড়ায় খুশি। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসাও করছেন কমিটির কর্তারা।

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজো শুরু হয় গত শুক্রবার। ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে মুখরিত থাকে প্রতিটি মন্দির ও পুজোমণ্ডপ। বৃহস্পতিবার শুরু হয় দুর্গাপুজোর  আনুষ্ঠানিকতা।

 গোধূলি লগ্নে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটে উৎসবের। শনিবার ছিল মহাসপ্তমী। রবিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পুজো সোমবার মহানবমী আর আজ মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও এসব মণ্ডপে ঘুরতে আসায় উৎসবটি ছিল সার্বজনীন।

মর্ত্যের কল্যাণে এক বছর বাদে আবার এসো মা ভক্তদের মাঝে এমন আকুতির মধ্য দিয়ে আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার  মধ্য দিয়ে শেষ হল এই দুর্গাপুজো। সমাপন ঘটলো মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ। 

দেবী দুর্গার বন্দনায় পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজ থেমে এখন নিশ্চুপ পুজোমণ্ডপগুলো।

ধর্মের গ্লানি আর অধর্ম রোধ, সাধুদের রক্ষা, অসুরের বধ আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মাঝে আবির্ভূত হন। শুভ বিজয়ার মাধ্যমে জাগতিক প্রাণীকে শোনান সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী।   

অশুভ শক্তিকে বিনাশ বিশ্বের মানুষের কল্যাণ এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার সমাপন ঘটলো  বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজো।  

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজো উপলক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে । রাজধানীসহ সারাদেশে ৩১ হাজারেও বেশি পুজোমণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এই বাঙরার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে তাই এক মহামিলন ঘটে সবার। এবারের পুজোও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে- এটি স্বস্তির দিক।

মাকে বিদায় জানাতে আজ সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নেমেছিল ভক্তদের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। টানা মন্ত্রপাঠ। উলুধ্বনি আর অঞ্জলি। সঙ্গে ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। ধান, দূর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানায় ভক্তরা।

আজ একদিকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। অনেক হিন্দু আজ উপবাস করবেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলেছে আবির উৎসব।  রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পুজো কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিকেলে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশে সরকারি ছুটি।  

রাতে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। অবশ্য সংবাদপত্রগুলো এদিন বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বঙ্গভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জিত করা হবে।

নিবন্ধের প্রতিবেদক আজকের বাংলাদেশ পোস্ট অনলাইন নিউজপোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক। 


বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ   https://www.ajkerbangladeshpost.com