ন্যাভিগেশন মেনু

মাগুরায় কাত্যায়নী পূজায় এবার থিম পুরাকীর্তি ও যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনী


মাগুরা থেকে সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ আয়োজনে মাগুরায় অনুষ্ঠিত হয় কাত্যায়নী পূজা। কাত্যায়নী পূজা শুরু হচ্ছে শনিবার সন্ধ্যায়, যা চলবে আগামী পাঁচদিন।

এবার দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার দর্শনার্থীর আগমনের কথা মাথায় রেখে এবার প্রতিটি পূজামণ্ডপ সাজানো হয়েছে নানা পুরার্কীতির আদলে। প্রতিমা, গেট, প্যান্ডেল ও আলোক সজ্জায় যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সঠিক সময়ের আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য শেষ সময়ে গেট, প্যান্ডেল ও প্রতিমা শিল্পীরা দিন-রাত কাজ করেছেন।

এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে কমিটি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপুজো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও মাগুরায় এর ব্যাতিক্রম দেখা যায়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাঝে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হলেও মাগুরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে কাত্যায়নী পূজাই  মূল উৎসব।

এ পূজাকে ঘিরে শেষ সময়ে এসে শিল্পীরা প্রতিটি পূজাকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার জন্য নানা পুরাকীর্তি ও যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনীর আদলে গড়ে তোলার জন্য দিনরাত ধরে কাজ করে গিয়েছেন। কাত্যায়নী পূজা দেখতে ইতিমধ্যে সুদূর আমেরিকা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাগুরায় এসেছেন ওহিদুর রহমান।

তিনি জানান, দীর্ঘ বছর তারা আমেরিকা বসবাস করছেন। কিন্তু তারা কাত্যায়নী উৎসব উপভোগ করার জন্য দুই-এক বছর পর-পর দেশে বেড়াতে আসেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও অনেকে এ পূজা দেখতে মাগুরায় এসেছেন।

খুলনা থেকে তাপস বোস স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে মাগুরায় এসেছেন কাত্যায়নী পূজা উপভোগ করতে। তিনি জানান, প্রতি বছরই তিনি এ পূজা দেখতে মাগুরায় আসেন। তার এলাকা থেকে প্রতি রাতেই এ পূজা দেখতে কমপক্ষে ২০-২৫ টি মাইক্রোবাস ও ৪-৫ টি বাস ভরে দর্শনার্থী আসেন মাগুরায় পূজা দেখতে।

মাগুরা নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ চিমায়নন্দ মহারাজ বলেন, মা দুর্গা বহুরূপে আবির্ভূত  হয়েছেন। মা কাত্যায়নী মা দুর্গার একটি রূপ। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য গোপিগণ যমুনা নদীর তীরে বালু দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে প্রথম শ্রীশ্রী ক্যাত্যায়নী পূজা  করেন।

এতে ভগবান  শ্রী কৃষ্ণ খুশি হয়ে গোপি গণের মনোবাসনা পূর্ণ করেন। তারপর থেকেই মূলত কাত্যায়নী পূজার প্রচলন।

মাগুরা জামরুলতলা পূজা কমিটির সভাপতি ও মাগুরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু বলেন, দুর্গাপুজোকে হিন্দুধর্মের মানুষেরা বড় পূজা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সরাবিশ্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ধুমধামের সাথে ব্যপক আয়োজনে দুর্গাপুজো করে আসলেও মাগুরায় এ ব্যতিক্রম।

মূলতঃ বর্ষার শেষ দিকে ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে ইলিশসহ অন্যান্য মছের ভরা মৌসুম। এ সময় মাগুরা পারনান্দুয়ালীর এলাকার মৎস্যজীবীরা ৫০ কিলোমিটার দূরে ফরিদপুর জেলার পদ্মা নদীতে শিকারে ব্যস্ত থাকতেন।

কার্তিক মাসে মাছের মৌসুম শেষ হলে তারা বাড়িতে ফিরে আসতেন। যেহেতু আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত দুর্গাপুজোয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষেরা অংশ নিতে পারতেন না।

সে জন্য এ সম্প্রদায়ের নেতা ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী  সতীশ মাঝি দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস পরে কার্তিক মাসে পারনান্দুয়ালী গ্রামে দুর্গাপুজোর আদলে প্রতিমা তৈরি করে মহাধূমধামে কাত্যায়নী পূজা শুরু করেন।

মূলতঃ তার পর থেকে মাগুরা শহরসহ গোটা জেলায় এ পূজা ছড়িয়ে পড়ে।সতীশ মাঝি পাকিস্তান শাসনামলের শেষ দিকে একটি মামলায় জড়িয়ে পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনসহ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার গঙ্গানদী সংলগ্ন কালনায় গিয়ে বসতিস্থাপন করেন।

মাগুরা পূজা কমিটির নেতা বিকাশ বিশ্বাস বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবার নতুন-নতুন থিমের ওপর পূজার আয়োজন করা হয়েছে। একটি পূজার পেছনে প্রতিমা, গেট, প্যান্ডেল ও লাইটিংর জন্য প্রায় কোটি টাকা করচ করেছেন।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কুন্ডু কলেন, বিশ্বে একমাত্র মাগুরায় ব্যাপক আয়োজনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশ-বিদেশ থেকে এ পূজা দেখতে দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। হিন্দু-মুসলমান সকলে এক হয়ে উৎসবে অংশ নেয়।

এটা জেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) তারিকুল ইসলাম বলেন, কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে মাগুরা উৎসবের শহরে পরিণত হয়।

শান্তিপূর্ণভাবে এ পূজা সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর মত এবারও শান্তিপূর্ণভাবে কাত্যায়নী পূজা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।জেলা পূজা উদয়াপন কমিটি তথ্যমতে, এ বছর  মাগুরা শহরে নয়টিসহ জেলায় ৮৯টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এস এস

আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন - আজকের বাংলাদেশ পোস্ট