ন্যাভিগেশন মেনু

মানুষের দাবি নিরাপদ সড়ক


শায়খুল ইসলাম রতন

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

রাজধানীতে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে চার থেকে ছয় জন মারা যাচ্ছেন। এই মৃত্যুর হার এতো বেশি যে, তা উদ্বেগজনক এবং অগ্রহণযোগ্য।

সড়ক পরিবহন আইন ২৭৯ এবং ৩৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় ড্রাইভারদের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের শাস্তি প্রদানের বিধান ছিলো, এতে চালকরা জামিনও পেয়ে যেতো।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ নতুন সড়ক ও পরিবহন আইন কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যদিও আইনটি অনেক আগেই কার্যকর করা হয়েছিলো কিন্তু অদৃশ্য কারণে এটি আট বছর ধরে স্থগিত ছিলো।

গত বছরের আগস্টে নতুন সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয় এবং ৭ সেপ্টেম্বর আইনটি সংসদে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।

বিধির ৩০৪ এর বি ধারায় বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বা নিহত হলে ড্রাইভারকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়।

নতুন এই সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে সড়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি অতীতের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। তারা শাস্তি বাড়ানোর সুপারিশ করেছিলেন। নতুন আইন আগের আইনটির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। নতুন আইনটি ড্রাইভারদের আরও বেশি সচেতন হতে বাধ্য করবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা নতুন আইনে কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছেন। প্রস্তাবনাগুলি হলো-

• দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

• ড্রাইভারের বেতন এবং কাজের সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট করতে হবে।

• বিআরটি-এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

• পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের জন্য ট্র্যাফিক আইন নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

• মহাসড়কগুলিতে ট্রাফিকদের যান চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ বক্স তৈরি করা।

• পর্যায়ক্রমে সমস্ত মহাসড়কে সড়ক ডিভাইডার নির্মাণ করা।

• গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

• রেলপথ ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাস্তাগুলিতে চাপ কমাতে হবে।

• টেকসই পরিবহনের কৌশল তৈরি এবং প্রয়োগ করা।

• 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮' এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং অদক্ষ চালক সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

তবে এটি উল্লেখ করার মতো বিষয় যে, হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন বাস এবং ট্রাক অবৈধভাবে রাস্তায় চলাচল করছে। আইন অনুসারে, যানবাহনের জন্য প্রতিবছর বার্ষিক ফিটনেস চেকআপ করা বাধ্যতামূলক। এগুলোর মধ্যে ট্রাকগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। সারাদেশে রাস্তায় চলাচলকারী অর্ধেক ট্রাক চলাচলের অযোগ্য।

এ ছাড়াও বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকরাও রাজধানীতে সড়কগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি অ্যাপভিত্তিক রাইড পরিষেবা চালু হওয়ার পর থেকে নতুন মোটরসাইকেলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারাদেশে মোট মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮ হাজার ৫২৩টি। এরমধ্যে ঢাকা শহরে প্রায় ৭ লাখ মোটরসাইকেল চলাচল করে।

ফিটনেসবিহীন পুরাতন বাস, ট্রাক ও অবৈধ মোটরসাইকেল সারাদেশের রাস্তা দখল করেছে। বাস, মোটরসাইকেলের কারণে রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নারী, শিশু এবং বয়স্করা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এটা লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ফিটনেসবিহীন যানবাহন সনাক্ত এবং ডাম্প করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও, তারা মোটরসাইকেল চালকসহ কোনও চালককেই লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চালকের দক্ষতা বাড়ানো, যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানো থেকে নিরুৎসাহিত করে রাস্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

এ ছাড়াও, রাস্তায় লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

লেখক: মোঃ শায়খুল ইসলাম রতন, বাংলাদেশ পোস্টে কর্মরত

ওআ/ এস এস/এডিবি