ন্যাভিগেশন মেনু

মির্জাগঞ্জে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসবে মেতেছেন চাষীরা


পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চলতি মৌসুমে আউশের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এখন চলছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব।

চলতি বছরে করোনা দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়েও আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। করোনার সংকটকালে আউশ ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

তবে আউশের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ধানের ন্যায্যমুল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ায় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আবার ধান মাড়াই করার কাজে ব্যস্ত। তাদের যেন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই! পরিবারের সকল সদস্য মিলে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এবার চলতি আউশ মৌসুমে ৭ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন মাঠে স্থানীয় জাতের আউশ রোপন হয়েছে মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে এবং বাকি সব জমিতে উফশি আউশ রোপণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন চাল। উপজেলায় এবারে উফশি জাতের মধ্যে ব্রি-ধান -২৭, ৪২, ৪৩, ৪৮, ৫৫, বাউ-৬৩, (আবদুল হাই) ও বিআর-২৬ এবং স্থানীয় কালাবোরো জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।

এবার চাষী পর্যায়ে বীজ উৎপাদনের জন্য সরকারি অর্থায়নে ৩৫টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। গতবারের আউশের ভালো ফলন দেখে এবারে আউশ চাষে কৃষকের আগ্রহ দেখা গেছে। ফলে গতবারের চেয়ে এবারে ২৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে।

পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের আঃ রব, নুরুল ইসলাম, সাহেব আলী, মন্নান মল্লিকসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম কম। এবার ৬০০-৭০০ টাকা দরে মণ বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত বছর ৮০০-৮৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন।

তারা জানান, গতবছরের চেয়ে এবছর চাষাবাদ খরচ, সার ও কীটনাশক খরচসহ সব ধরনের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে ধানের দাম কমেছে। তাই সবকিছু মিলিয়ে চাষাবাদে যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকা উঠাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।

'বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলে লাভ হতো। ধানের বাজারে উপজেলা প্রশাসন নজর দিলে আমরা লাভের মুখ দেখতাম,' যোগ করেন তারা।

সুবিদখালী বাজারে ধান ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করায় কৃষকদের কমমূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্যে করছেন বলেন তারা অভিযোগ করেন।

তারা আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া যে পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে তাদের মজুরির পরিমাণও বেশি। তবে ধানের বাজার দর বাড়তি থাকলে এবারের আউশ আবাদে কৃষকরা লাভবান হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আরাফাত হোসেন বলেন, কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার কর্তৃক ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা মন ঘোষণার পর গতবারের চেয়ে এবার আউশের আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মির্জাগঞ্জে চলতি মৌসুমে আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে।

তবে গতানুগতিক ধারায় স্থানীয় জাত ব্যবহার না করে উন্নত জাতের ধান চাষ করলে ফলন আরও বেশি হতো। যেমন ব্রি ধান ৪৮, ৮২, ৯৭ ইত্যাদি স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল জাত আবাদ করলে কৃষকরা হেক্টর প্রতি ১.৫-২ টন ফলন বেশি পাবে এবং সেই সাথে আমন ধান আবাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। কিছু অসাধু আড়তদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমদামে ধান ক্রয়ের পায়তারা করছে। তবে এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে এবং যে কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো কার্পণ্য করবে না।

এআরএস/সিবি/এডিবি/