ন্যাভিগেশন মেনু

মুন্সীগঞ্জে কালের স্বাক্ষী সুলতানী আমলের মসজিদ


মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল: বাবা আদমের মসজিদ। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের দড়গাবাড়ির ছয় গম্বুজের এই প্রাচীন মসজিদ ঘিরে পর্যটকদের নানা কৌতুহল। চমৎকার নির্মাণশৈলীর এই মসজিদ ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৩৬  প্রশস্ত। এর দেয়ালগুলো ৭৮ ইঞ্চি পুরো।

দুই দেয়ালের মাঝখানে ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি করে লম্বা ও সাড়ে ৫ ফুট ব্যাসার্ধের দুটি কালো পাথরের স্তম্ভ পুরো মসজিদের ভার বহন করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

মসজিদটি পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মিলন বলেন, উত্তরপাশের স্তম্ভের পাথর প্রায়ই ঘামে। এই পাথর মসজিদকে ঠান্ডা শীতল রাখছে। দক্ষিণপাশের স্তম্ভের পাথরটি একই রকম হলেও এটি প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণতা ছড়ায়।

পূর্ব দিকে শুধু প্রবেশ পথের তিনটি দরজা রয়েছে। তবে খোলা থাকছে মাঝেরটি। কোনো জানালা ছাড়াই মসজিদের তাপমাত্রা বিষ্ময়কর।

তিনি জানান, সুলতান জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ শাসন আমলে ১৪৮৩ সালে মালেক কাফুর এই মসজিদ নির্মাণ করেন। স্থাপত্যকলা অনুযায়ী মসজিদ ভবনটির সস্মুখের দিকে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে।

প্রবেশপথের উপরে ফার্সি অক্ষরের খোদাই করে কালো পাথরের ফলক লাগানো আছে। মূল দেয়াল থেকে সামনের দিকে অগ্রসর হলে চার কোনায় চারটি ত্রিভূজ আকৃতির স্তম্ভ চোখে পড়বে। ভেতর মেহরাবটির দুইপাশে দুইটি দেয়ালে রেকের মতো খোদাই করা কারুকাজ রয়েছে। মেঝেটি ইট বিছনো।

মসজিদের খিলান দরজা, স্তম্ভের পাদদেশে মেঝে ও ছাদের কার্ণিশের তলা দিয়ে পাতলা ইট কেটে মুসলিম স্থাপত্যকলার নকশা লক্ষ্য করা যায়।

পোড়ামাটির ইটের সাথে সুরকি, চুন আর তেঁতুলের পানি দিয়ে ৫৩৮ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদটি সুলতানি আমলের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মসজিদের প্রবেশ পথের দুইপাশে ও উত্তর দক্ষিণের দেয়ালে ইটের ফলকের সুদৃশ্য কারুকাজের উপস্থিতি বিদ্যমান উল্লেখ করে প্রাচীন মসজিদটির খতিব ও পেশ ইমাম মাওলানা মাহবুবুর রহমান সালেহী বলেন, প্রাচীন এই মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম দেয়ালে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে ইট খুলে গেছে। মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। ১৯৪৮  থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে।মিরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র খন্দকার মোহাম্মদ হোসেন রেনু জানান, ১৯০৯ সালে শেষবারের মতো মসজিদটি সংস্কার করা হয়।

তিনি মনের করেন, এটি আশু সংস্কার প্রয়োজন।

ছয় টাকা মূল্যের ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছে চমৎকার এই মসজিদের ছবি।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, মসজিটি যথাযথভাবে সংস্কার এবং পর্যটকদের সঠিক তথ্য দিতে পুস্তিকা করার ইচ্ছা রয়েছে। একই সাথে মসজিদটি সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, বাবা আদমকে তার দরগার পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার সমাধির পাশেই ৩১৯ বছর পর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

১০৯৯ সালে মক্কার তায়েফে জন্ম নেওয়া বাবা আদম ১১৪২ সালে এই বাংলায় আসেন ইসলাম প্রচারে।

এমএনইউ/এডিবি/