ন্যাভিগেশন মেনু

মৃত ব্যক্তি দাফনে নৌকার অপেক্ষায় থাকতে হবে না আর


পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের চরসেনগ্রাম ও নটাবাড়িয়া গ্রামের মধ্যে অবস্থিত কিনু সরকারের জোলার (খাল) উপর বৃটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল একটি স্লুইজ গেট। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এ স্লুইজ গেটের উপর দিয়ে জোলার (খালের) পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করতো। প্রায় এক যুগ আগে স্লুইজ গেটটি ভেঙ্গে গেলে হুমকির মুখে পরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এ এলাকার মানুষের চলাচলের অসুবিধাও প্রকট আকার ধারণ করে।

স্লুইজ গেটটির অদূরে বছর দশেক আগে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি স্লুইজ গেট নির্মিত হয়। কিন্তু দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় মানুষের যাতায়াতের কষ্ট থেকেই যায়। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। বিশেষতঃ আষাঢ় থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত প্রায় সাত মাস স্লুইজ গেটের পূর্বপার পানিতে ডুবে থাকে। এলাকার কবরস্থানটি জোলার পশ্চিমপাশে অবস্থিত হওয়ায় পূর্বপারের কোন মানুষের মৃত্যু হলে তাকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকার কোনো বিকল্প নেই।

এমতাবস্থায় পুরাতন স্লুইজ গেটের স্থানে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৮ হাজার ৮২ টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পূর্বপাড়ের গ্রামের মৃত ব্যক্তি দাফনে নৌকার জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। পাশাপাশি বছরের সব সময় যানবাহনও চলাচল করতে পারবে। এ এলাকার মানুষের প্রায় এ যুগের কষ্টের দিন শেষ হবে।

জোলার পূর্বপাড়ের চরসেনগ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, গ্রামে কোনো মানুষের মৃত্যু হলে তাকে দাফনের জন্য কবরস্থানে নিতে নৌকার বিকল্প কিছু নেই। অনেক সময় নৌকা পেতে দেরি হলে মৃতব্যক্তিকে কবরস্থানে নিতে ও দেরি হয়।

একই গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টার জানান, গ্রামের কেউ মারা গেলে তাকে কবর স্থানে নিতে নৌকাই আমাদের একমাত্র ভরসা। বছরের প্রায় সাত মাস এ অবস্থা বিরাজ করে।

জোলার পশ্চিমপাড়ের বাসিন্দা রুহুল আমীন জানান, জোলার পূর্বপারে উত্তর সেনগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, চরসেনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরসেনগ্রাম চাইল্ড কেয়ার প্রিক্যাডেট স্কুল রয়েছে। পশ্চিমপারে কবরস্থানের পাশেই আশরাফুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা। এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশপাশ এলাকার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। স্লুইজ গেটে সংযোগ সড়ক না থাকায় এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ পাশর্ববর্তী চরসেনগ্রাম, নটাবাড়িয়া, ধানকুনিয়া, বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর, করকোলা, দড়িপাড়া, মহাজেরপাড়া, চরপাড়া, দোদারিয়া, সোনাহার পাড়া, জাবরকোল, পৈলানপুর, মথুরাপুরসহ প্রায় ২০/২৫ গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়ত কষ্ট করতে হচ্ছে।

উপজেলা সদরের সাথে আমাদের যোগাযোগ কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। সন্তানসম্ভবা মা, শিশু, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে বছরের পর বছর আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। মাঠ থেকে ফসলাদি বাড়িতে আনতে এবং গরু-বাছুর নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি। পুরাতন স্লুইজ গেটের স্থানে যে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের একটি সমস্যা দূর হবে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, পাবনার চাটমোহরের ধানকুনিয়া-দোদারিয়া ভায়া নটাবাড়িয়া সড়কের কিনু সরকারের জোলায় (খালে) ৪০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ ছাড়া) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (জউজওউচ) অধীনে ব্রিজটি নির্মিত হচ্ছে। এই ব্রিজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার ৭০৬ টাকা। চুক্তিমূল্য নির্ধারণ হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৮ হাজার ৮২ টাকা। পাবনার ঠিকাদার জাহিদুর রহমান ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছেন। কাজ শুরুর তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০২০। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। কিনু সরকারের জোলায় গুমানী নদীর পানি ঢুকে পড়ায় আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। আশাকরছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তখন এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের কষ্টও আর থাকবে না।

আইকেআর/এসএ/এডিবি/