ন্যাভিগেশন মেনু

সিঙ্গাপুরে করোনার সঙ্গে ৫ মাস লড়ে বাড়ি ফিরতে চান রাজু


সিঙ্গাপুরে রাজু সরকার (৪২) নামে এক বাংলাদেশী কর্মী, যিনি কোভিড-৯-এর সাথে পাঁচ মাস যুদ্ধের পরে নাটকীয়ভাবে বেঁচে ফিরেছেন। এখন তিনি তার আট মাস বয়সি ছেলেকে দেখতে দেশে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন।

সিঙ্গাপুর স্ট্রেইট টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজু সরকার গত মার্চে যখন বাবা হন, তখন তিনি সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন।

গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাসিন্দা রাজু গত বছরের জুন থেকে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।

প্রায় এক মাস আগে যখন রাজু সরকারের জন্ম নেওয়া সন্তান সাফুন ফোনে তাকে বাবা বলে ডাকে এ সময় তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে নামে। তিনি বলেন, আমি তার থেকে শক্তি পেয়েছি, সে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজু সরকার করোনায় আক্রান্ত হন এবং এরপর প্রায় পাঁচ মাস ধরে কাটাতে হয় সিঙ্গাপুরের ট্যান টক সেং হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরমধ্যে অর্ধেক সময় থাকতে হয়েছে আইসিইউতে। এরপর গত জুন মাসে ছাড়া পান তিনি।

করোনামুক্ত হলেও এরপর তার শরীরে দেখা দেয় রক্তের প্লাটিলেট স্তর কমে যাওয়া এবং হার্টে সমস্যা। তবে, তিনি এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে। 

তিনি আশা করছেন, চিকিৎসকরা অনুমতি দিলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে তার ওজন ৫৯ কেজি, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার ওজন ৬৪ কেজি থেকে কমে ৪০ কেজি হয়ে গিয়েছিলো।

চিকিৎসকেরা জানান, তারা রাজুর সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় অবাক। কেননা তার অক্সিজেন স্তর অনেক কমে যায়, মনে হয়েছিল আর বাঁচবে না।

রাজু সরকার সিঙ্গাপুরে একটি আইটি ফার্মে কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কাজের বাইরে থাকার পরেও আশা করা হচ্ছে তার  নিয়োগকর্তা তাকে কম পরিশ্রমের কাজ দেবেন।

রাজু বলেন, আমার শারীরিক ক্ষমতা আর আগের মত নেই... আগে আমি আমার অবস্থার কথা ভাবতাম না। আমি খেয়েছি কি না তা নিয়েও মাথা ঘামাইনি, কিন্তু এখন আমায় সতর্ক হতে হবে।

যদি এটি বাস্তবায়িত না হয়, তবে সে ভালোর জন্য বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারে। যদিও তার শ্বশুর তাকে তার মুদি দোকানে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাজু সরকার আশা করেন, বাংলাদেশ সরকার তাকে এককালীন অনুদান বা একটি সরকারি চাকরীর মাধ্যমে সহায়তা করবে যা তার পরিবারকে সহায়তা করতে পারবে।

বর্তমানে রাজু তার কোম্পানির দেয়া আবাসনে আছেন, সেখানে ল্যাপটপে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন এবং ইসলামিক বই পড়ছেন।

মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা তাকে আরো ধার্মিক করেছে বলে জানান রাজু। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে, আমি চেষ্টা করছি সঠিক পথে চলার।

এদিকে, বাংলাদেশে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার (১৮) রাজুর ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। গাজীপুর থেকে ফোনে সিঙ্গাপুর স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, "বিদেশে এ জাতীয় দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এখন তাকে বিদেশে থাকতে দেওয়া আমার মন সায় দিচ্ছে না।"

সানজিদা আক্তার বলেন, তিনি চান যে, রাজু বাংলাদেশে ফিরে আসুক এবং এখানেই তার ক্যারিয়ার গড়ুক।

এডিবি/