ন্যাভিগেশন মেনু

যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালির স্বপ্নসারথী ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’


ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ায় বাংলাদেশি প্রকৌশলী আবুবকর হানিপের মালিকানাধীন ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এই ইউনিভার্সিটি চালুর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের সংযোজন ঘটলো।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিনে বাঙালির স্বপ্নসারথী হয়ে আবির্ভূত হলো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভার্সিটির মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অনুষ্ঠানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিচালকমন্ডলী, শিক্ষার্থী ছাড়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, সামিট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদ খান, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোমেন।

এছাড়াও ভিডিওতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ড. সাজ্জাদ হোসেন, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ। 

বহুজাতিক এ সমাজে প্রবাসীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই শুধু নয়, বাংলাদেশের উদ্যমী এবং মেধাবিদের দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের যে পাঠক্রম তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনে চাকরির পথ সুগম করবে। যতো বেশি বাংলাদেশি বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি পাবে ততোবেশি অর্থ যাবে বাংলাদেশে এবং ইতোমধ্যেই তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। 

ভার্সিটির চ্যান্সেলর এবং সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ বলেন, 'প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও দেওয়া হবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে, যাতে গ্র্যাজুয়েশনের সাথে সাথেই চাকরি পান সকলে। যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য শিক্ষার্ধী ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেও মাসের পর মাস চাকরি পান না। কারণ, অনেক দপ্তরেই পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগে। আইটি সেক্টরে চাকরি কখনোই মেলে না অভিজ্ঞতা না থাকলে। এই ইউনিভার্সিটিতে সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই অনুমতি সংগ্রহ করা হয়েছে।'

ইঞ্জিনিয়ার হানিপ আরও উল্লেখ করেন, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইউনিভার্সিটি তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসায় প্রশাসন, প্রোজেক্ট এবং হেল্থকেয়ার ম্যানেজমেন্টে যথেষ্ঠ সুনাম কুড়িয়েছে। চলতি বছর এর মালিকানাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থায় আমরা এসেছি। তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যাতে অবাধে ভর্তির সুযোগ পান সে চেষ্টা থাকবে। 

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের নামে দুটি স্কলারশিপ ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা এর একটি ব্যাচেলর এবং আরেকটি মাস্টার্স কোর্সের জন্য পাবেন। অর্থাৎ পুরো কোর্সের ৭৫% বৃত্তি দেওয়া হবে। এর বাইরেও রয়েছে আরও দু’লাখ ডলারের স্কলারশিপ বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে ইউনিভার্সিটি পরিচালনা পর্ষদের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ফারহানা হানিপ বলেন, গত দেড় দশকেরও অধিক সময়ে ‘পিপল এন টেক’র মাধ্যমে আমরা সংক্ষিপ্ত কোর্স দিয়ে মার্কিন আইটি সেক্টরে সাত হাজারের অধিক প্রবাসীকে উচ্চ বেতনে চাকরির পথ সুগম করেছি। সে অভিজ্ঞতায় আইটি, হেল্থ, হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবসায় প্রশাসনে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স কোর্সের সাথেই কারিগারি শিক্ষা দেওয়া হবে। সেটিই হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব। 

রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও যাতে এই প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে ভালো বেতনে চাকরি পান, সে জন্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট সকলকে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার দীর্ঘ বক্তব্যে বলেছেন, অভিবাসী সমাজের স্বপ্ন পূরণে অন্যতম প্রধান অবলম্বন হচ্ছে দক্ষ হিসেবে শিক্ষালাভ করা। বাংলাদেশের এক কোটি ২৩ লাখেরও অধিক মানুষ এখন বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তারা যদি আন্তর্জাতিক মানের চাকরির উপযোগী শিক্ষালাভে সক্ষম হন তাহলে বাংলাদেশই প্রকারান্তরে উপকৃত হবে। 

ড. মোমেন বলেন, বাঙালিরা খুবই সৌভাগ্যবান এজন্যে যে, শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা পেয়েছি আমরা। তার দূরদর্শীতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল। আমি আরেকটি সুখবর দিতে চাই যে, গতকালই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। এটিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণেই সম্ভব হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ৫ দিনের সরকারি সফরের শেষ দিন ড. মোমেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বক্তব্য দিলেন। 

ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অধ্যাপক এপাসটলোস ইলিয়পলাসের উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে ড. মোমেনকে ‘প্রক্লেমেশন’ দেওয়া হয় বাংলাদেশের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গিনে ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজের জন্য। এরপর করতালির মধ্যে কেক ও ফিতা কেটে যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালিদের জন্যে নয়া ইতিহাসের শুভ সূচনা ঘটানো হয়। 

উল্লেখ্য, ১৫ লাখের অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকেই বিভিন্ন কর্পোরেশনের মালিক, শীর্ষ কর্মকর্তা, ভাইস চ্যান্সেলরও রয়েছেন কয়েকজন। তবে এই প্রথম কোন বাংলাদেশি আমেরিকানের মালিকানায় পূর্ণাঙ্গ একটি ইউনিভার্সিটি চালু হলো। 

সিবি/এডিবি