ন্যাভিগেশন মেনু

যেকারণে পরিসেবা বাণিজ্য মেলাকেন্দ্রিক ‘বন্ধুত্বের বৃত্ত’ বাড়ছে ক্রমশ


ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) চশমা পরে গোলরক্ষক হওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে একজন ভার্চুয়াল মানবে রূপান্তরিত হওয়া শিরোনামে ২০২২ সালের পরিসেবা বাণিজ্য মেলা ৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। এই মেলা প্রদর্শকদের ওপর একটি অবিস্মরণীয় ছাপ ফেলেছে এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। 

ছয় দিনব্যাপী পরিসেবা মেলায় ৫০৭টি শিল্পের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো অফলাইনে অংশগ্রহণ করেছে। প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড এবং ইতালিসহ ১০টি দেশ মেলায় জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীকেন্দ্র স্থাপন করে। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুসারে, পরিসেবা বাণিজ্য মেলায় ১৩৩৯টি বিভিন্ন ফলাফল অর্জিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৭৩টি উদ্ভাবনী সাফল্য রয়েছে, যা আগের মেলার তুলনায় ৩৪টি বেশি।

উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও পণ্য এ মেলায় প্রাধান্য পেয়েছে। এতে প্রফলিত হয়েছে যে, পরিসেবা বাণিজ্যে "উদ্ভাবন" এখন আগের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক পরিসেবা বাণিজ্যে, উদ্ভাবন-সম্পর্কিত প্রযুক্তি ও তথ্য পরিসেবা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি পরিসেবার গবেষণা ও উন্নয়ন অনুপাত ২০০৫ সালের ১১.৪ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ১৮ শতাংশে উন্নিত হয়েছে।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের অন্যতম সক্রিয় ক্ষেত্র হিসেবে, ডিজিটাল অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি নতুন প্রাণশক্তি হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল অর্থনীতি শিল্পে বহু বছর ধরে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন, যা বিশ্ব অর্থনীতি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছে। পরিসেবা বাণিজ্য মেলা যেন একটি "পাওয়ার পাম্প"।

মেলার বার্ষিক থিম প্রদর্শনী এলাকার অ্যামাজন প্যাভিলিয়নে, আগতরা একটি স্মার্ট গাড়িতে বসে বুদ্ধিমান ভয়েস, স্পর্শকাতর পর্যবেক্ষণব্যবস্থার মাধ্যমে গাড়ির সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছেন, এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মাধ্যমে রাস্তার অবস্থা, আবহাওয়া ও ড্রাইভিং পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্রুত জানার প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। প্রযুক্তি ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য সহায়ক এবং "সবুজ" উন্নয়নের ভিত্তি শক্তিশালী করে। 

এবারের পরিসেবা বাণিজ্য মেলায় মানুষ দেখেছে প্রযুক্তির বাক্সে ‘সবুজ’-এর প্রাধান্য। গ্রিন ফাইন্যান্স থেকে শুরু করে সবুজ ভ্রমণ—সবই "শক্তি সঞ্চয় ও নিম্ন-কার্বন"-এর বৈশিষ্ট্যময়। এর মধ্যে একটি চীনা কোম্পানির তৈরি ‘কার্বন প্ল্যানেট’ ভিজ্যুয়ালাইজেশন পণ্য খুবই নজরকাড়া ছিল। অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কার্বন নির্গমন পরিস্থিতি  উপস্থাপন করা হয় মেলায়। বিদ্যুত, পরিবহন, শিল্প এবং আবাসিক খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমনের ভূমিকা সরাসরি ডিজিটালভাবে প্রদর্শিত হয়েছে মেলায়।

চলতি বছর পরিসেবা বাণিজ্য মেলা শুরুর দশম বার্ষিকী। গত দশ বছরে, চীনের সেবা বাণিজ্যে অংশীদারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০টি দেশ ও অঞ্চলে। এমন এক সময়ে যখন বিশ্বায়ন প্রতিকূল স্রোতের সম্মুখীন হচ্ছে এবং আঞ্চলিক সংঘাত ঘন ঘন হচ্ছে, পরিসেবা মেলাকেন্দ্রিক "বন্ধুত্বের বৃত্ত" ক্রমশ বেড়েছে। শুধুমাত্র চীনা বাজারের শক্তিশালী আকর্ষণের কারণে নয়, এটি চীনের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ, সহযোগিতা গভীরতর করা এবং নব্যতাপ্রবর্তনের কারণেও হয়েছে। এর মাধ্যমে চীনের দৃঢ়ভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উন্নীত করার সংকল্পও প্রতিফলিত হয়েছে। 

চীনের সরকারী তথ্য অনুসারে, গত দশ বছরে চীনের সেবা বাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানি গড়ে ৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বের গড় বৃদ্ধির চেয়ে ৩.১ শতাংশ বেশি। চীনের পরিসেবা বাণিজ্য টানা আট বছর ধরে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চায়না রিসার্চ সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর জেমির আওয়ান বলেছেন, পরিসেবা মেলার মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন "বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রজ্ঞা ও শক্তির অবদান রাখছে"। (সূত্র: সিএমজি)