ন্যাভিগেশন মেনু

যে বাঁধ ভেঙ্গে নিঃস্ব, সেই ভাঙ্গা বাঁধেই বেঁচে থাকার চেষ্টা


ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে যে বাঁধ ভেঙ্গে সর্বস্ব হারিয়েছে হাজারো পরিবার, সেই ভাঙ্গা বাঁধের উপরই ঝুপড়ি তৈরি করে এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের মানুষ রামনাবাদ নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিদিনই দুই দফা প্লাবিত হচ্ছে।

এ কারনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মানুষ জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। গত প্রায় এক মাস ধরে দুই শতাধিক পরিবারের শিশু, বৃদ্ধদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে চান্দুপাড়া বাঁধের উপর। এসব পরিবারে নেই বিশুদ্ধ পানি, রান্নার চুলা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। তারপরও জলোচ্ছাস থেকে বাঁচতে পাঁচ-দশফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পলিথিন, তাল ও কলাপাড়ার ছাউনি দেওয়া ঘরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তারা।

২০০৭ সালের সিডরের পর গত ১৩ বছরে একাধিক ঝড়, জলোচ্ছাসে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের পর যেন অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষগুলো। ঝড়ের ঝাপটায় ঘরের কিছুটা ক্ষতি হলেও সেখানে এখন বসবাসের উপায় নেই। প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুই বেলা রাবনাবাদ নদীর তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে।

নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ গ্রামে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারনে সম্পদ নষ্ট হলেও জীবন বাঁচাতে খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি তৈরি করে এখন কোনোরকম দিনাতিপাত করছে শতশত পরিবার। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য ষাটোর্ধ ধলা বিবি বলেন, ‘১৯৭০, ১৯৯০ সালের বন্যা, ২০০৭ সালের সিডর এরপর আইলা, মহাসেন, আম্পান ঝড় তারা মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু এবারের মতো তাদের গৃহহারা হতে হয়নি। অবস্থা সম্পন্ন পরিবার থেকে শুরু করে দিনমজুর, চান্দুপাড়া গ্রামের ৯০ ভাগ পরিবারের বাস এখন এই বাঁধের উপর।’

৭০ বছর বয়সী চান্দুপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, ‘ঝড়ের পর স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিছু পরিবারকে চাল-ডাল সহায়তা করেছেন। কিন্তু তারা এখন ত্রান চান না। তারা চান স্থায়ী বেড়িবাঁধ। ঘর থাকলেও সেই ঘরে থাকার এখন উপায় নেই। বেড়িবাঁধের উপর প্রতিদিনই তাদের ভিজতে হচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। গোটা এলাকায় পুকুর তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ কারনে অনেক মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী।’

এ বিষয়ে লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস তপন বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। রাস্তার উপর খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে পরিবারগুলো। এ পরিবারগুলো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পড়েছে ভাঙ্গা বাঁধের কারনে। এখন প্রতিদিন বৃষ্টি ও নদীর জোয়ারে তারা প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’

পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, লালুয়া ইউনিয়নের মানুষ প্রতিটি ঝড় জলোচ্ছাসেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের কারনে। তাই বাঁধ পুনঃনির্মাণ দ্রুত শুরু করতে বিষয়টি এবার সংসদে উপস্থাপন করবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করবেন।

এমকেআর/এমআইআর/এডিবি/