ন্যাভিগেশন মেনু

যে ব্যক্তিত্ব গড়ে দেবে নারীর ভবিষ্যৎ


প্রতিবছরই দারুণ কিছু বার্তা নিয়ে আসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশেষ এই দিবসগুলো আসে আবার চলে যায় কিন্তু কতটা পরিবর্তন হয় নারীদের অবস্থান! একজন নারী হিসেবে আমি সহজেই বুঝতে পারি যে আসলে আমাদের আসল ঘাটতিটা কোথায়।

তাই এবারের নারী দিবসে আমি চিন্তা করেছি কিছু কথা শেয়ার করব সবার সঙ্গে। কারণ, আমার পরিবর্তনটাও আমি প্রত্যাশা করি। আসলে নারী ব্যক্তিত্বের এমন কিছু শক্তিশালী দিক আছে যা অর্জন করা গেলে পাল্টে দিতে পারে নারীদের সামাজিক অবস্থান।

সবার আগে জানা দরকার, কোন পথে হাঁটতে চাই আমি। যদি সংসার করতে চাই সেটা একটা পথ। আর যদি আমি একজন কর্মজীবী নারী হতে চাই সেটা আরেকটি পথ। আর কর্মজীবী নারী হওয়ার পরও ভালোভাবে সংসার সামলানো, সেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ।

যে যে পথই বেছে নিক না কেন সেখানে ভালো অবস্থান তৈরি করতে প্রয়োজন হয় শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের।  

প্রথমেই আমি বলবো, নিজের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মধ্যে একটা ভারসাম্য দরকার। একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। নিজের প্রতি ভালোবাসা বলতে আমরা আসলো কতটুকু বুঝি? এক্ষেত্রে নারীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। পরিবারে সব সদস্যের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয় অবহেলিত হয়। আসলে নিজের শরীরের একটা ভাষা থাকে, মনের গহীনে কিছু শব্দ থাকে, যেটা নিজে ছাড়া অন্য কেউ কখনোই পুরোপুরি বুঝতে পারে না। এজন্য নিজের ব্যাপারেও যত্নশীল হওয়া দরকার। বিশেষ করে এমন কিছু রোগ বাসা বাঁধে মনের ভিতর কিংবা শরীরে যেটা প্রকাশ করা হয় না দীর্ঘদিন, যা ধীরে ধীরে বড় হয়, সমস্যা জটিলতর করে। একটা সময় গিয়ে এগুলোই বোঝা হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য। তাই আগে থেকেই সচেতন হয়ে ব্যাপারগুলো শেয়ার করা দরকার আপন কারোর সঙ্গে।

জীবনে নিজের ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে চাইলে 'মানুষ কি বলবে' বা 'অন্যরা কি বলবে' এসব চিন্তা চেতনাকে কখনোই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত না। এসব আমলে নিলে এগিয়ে যাওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যাবে সব সম্ভাবনার পথ। অন্তত নিজের ইচ্ছেগুলো খাতায় লিখে রাখার চেষ্টা করবেন, যেন সুযোগ পেলে মনে পড়ে যায় নিজের লালিত স্বপ্নগুলো। পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করবেন আর সুযোগ না পেলে পরিবেশ নিজেকেই তৈরি করতে হবে।

নারীর দীর্ঘ বঞ্চনার পেছনে রয়েছে নিজেদেরই তৈরি করা কিছু কারণ। নারী যদি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, তাহলে সেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। একজন নারী যদি সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাকে সেই অধিকার চাইতে হবে, লড়াই করতে হবে সেই অধিকারের জন্য। সাহস নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হবে। অধিকার বা স্বাধীনতা শব্দ দুটি কখনোই কেউ কাউকে দেয় না, নিতে হয় আদায় করে।

একদম শেষে ছোট্ট একটি পরামর্শ রাখতে চাই। একজন নারী তার স্বপ্নকে সংরক্ষণ করে রাখবে। স্বপ্নপূরণের জন্য কাজ করবে। প্রতিদিনের কাজের একটি লিস্ট তৈরি করে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দিনশেষে কতটুকু কাজ করা হলো আর কতটুকু বাকি থাকলো তার হিসাব কষে নিলে সবগুলো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সহজ হয়। এভাবে প্রতিদিনের পাশাপাশি সাপ্তাহিক বা মাসিক বা বার্ষিক পরিকল্পনা নেওয়া যায়। আজকে ২৭ বছরে দাঁড়িয়ে আগামী ২০ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাই, সেটা যদি কল্পনা করি তবে স্বপ্নের পথে আজ থেকেই যাত্রা করা সম্ভব।  

- আফরোজা সারাহ্ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী