ন্যাভিগেশন মেনু

রাইসিনা সংলাপ ২০২১ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদি’র ভাষণ


মহামান্যগণ!

বন্ধুগণ, নমস্কার!

মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে রাইসিনা সংলাপের এই সংস্করণটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি বৈশ্বিক মহামারী এক বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে।

সর্বশেষ এক শতাব্দী আগে এ ধরণের বৈশ্বিক মহামারী হয়েছিল। যদিও মানবসভ্যতা তখন থেকেই অনেকগুলি সংক্রামক রোগের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু বিশ্ব আজ কোভিড -১৯ মহামারীটি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নয়।

আমাদের বিজ্ঞানী-গবেষকগণ এবং শিল্প কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

এই ভাইরাস কী?

কীভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ে?

আমরা কীভাবে সংক্রমণের মাত্রা ধীর করতে পারি?

আমরা কীভাবে টিকা তৈরি করব?

আমরা কীভাবে দ্রুতগতিতে বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন উৎপাদন করব?

এই জাতীয় অনেক প্রশ্ন যেমন উঠেছে তেমনি অনেকগুলি সমাধানও উদ্ভূত হয়েছে। নিঃসন্দেহে সামনে আরও অনেক সমাধান আসবে। তবে বৈশ্বিক চিন্তাবিদ এবং নেতা হিসেবে আমাদের অবশ্যই আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে নিজেদেরকে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, আমাদের সমাজের সকল বিজ্ঞজনেরাই এই মহামারীটি মোকাবিলায় নিয়োজিত। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের সমস্ত পর্যায়ে এই মহামারীটি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।

এটা কেন হলো? এর কারণ কি এই যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে মানবতার কল্যাণ পিছিয়ে পড়েছে?

এর কারণ কি প্রতিযোগিতার যুগে মানুষ সহযোগিতার চেতনা ভুলে গেছে? এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর আমাদের সাম্প্রতিক অতীতে পাওয়া যাবে। বন্ধুরা, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার উত্থানকে অনিবার্য করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরের কয়েক দশক ধরে অনেকগুলি কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল, তবে দু’টি যুদ্ধের ছায়ায় সেগুলির লক্ষ্য ছিল একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর খোঁজা- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

আজ আমি আপনাদের বলতে চাই যে, এটি ছিল ভুল প্রশ্ন। ফলে গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপ ছিল অন্তর্নিহিত কারণগুলিকে শনাক্ত না করে রোগীর চিকিৎসা করার মতো।

অন্যভাবে বলতে গেলে, গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপ ছিল পরবর্তী যুদ্ধ নয় বরং শেষ যুদ্ধটি প্রতিরোধ করার জন্য। প্রকৃতপক্ষে, মানবতা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি না হলেও, মানুষের জীবনে সহিংসতার হুমকি কমেনি। বেশ কয়েকটি ছায়া যুদ্ধ এবং অন্তহীন সন্ত্রাসী আক্রমণসহ, সহিংসতার সম্ভাবনা সর্বদা উপস্থিত রয়েছে।

তাহলে, সঠিক প্রশ্নটি কী হতে পারত?

হতে পারত:

আমাদের দুর্ভিক্ষ আর ক্ষুধা কেন আছে?

আমাদের দারিদ্র্য কেন আছে?

বা সবচেয়ে মৌলিকভাবে

কেন আমরা সমগ্র মানবতার প্রতি হুমকিস্বরূপ সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করতে পারি না?

আমি নিশ্চিত যে, আমাদের চিন্তাভাবনা যদি এই ধরণের হতো তবে বিভিন্ন সমাধান বের হয়ে আসত।

বন্ধুগণ!

এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি। বিগত সাত দশকের ভুলের কারণে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের চিন্তাভাবনাকে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। কোভিড -১৯ মহামারী আমাদের বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের এবং আমাদের নতুন করে চিন্তা করার একটি সুযোগ দিয়েছে।

আমাদের অবশ্যই এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যা আজকের সমস্যা এবং আগামীর চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান করবে। কেবল আমাদের সীমার এপারে যারা রয়েছেন তাদের কথা না ভেবে আমাদের অবশ্যই সমগ্র মানবতার কথা চিন্তা করতে হবে।

সামগ্রিকভাবে মানবতা আমাদের চিন্তাভাবনা এবং কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে।

বন্ধুরা!

এই মহামারী চলাকালীন নিজস্ব উপায়ে এবং সীমিত সংস্থানের মধ্যেও আমরা ভারতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা নিজেদের ১.৩ বিলিয়ন নাগরিককে মহামারী থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।

একই সাথে আমরা অন্যদের মহামারী মোকাবিলায় সমর্থন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের আশেপাশে, আমরা সংকট প্রতিরোধে আমাদের সমন্বিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়াকে উৎসাহিত করেছি।

গত বছর আমরা দেড় শতাধিক দেশের সাথে ওষুধ এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম ভাগ করে নিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পাসপোর্টের রঙ নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকেই এ মহামারী থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত মানবজাতি মহামারীকে পরাভূত করবে না।

এ কারণেই, এই বছর অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা ৮০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি। আমরা জানি যে, বিশাল চাহিদার বিপরীতে সরবরাহগুলি পরিমিত ছিল।

আমরা জানি যে, পুরো মানব জাতিকে টিকা দিতে অনেক সময় লাগবে। আমরা এও জানি যে, আশাহত হতে নেই। এটি সবচেয়ে ধনী দেশগুলির নাগরিকদের পক্ষে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যারা দরিদ্র দেশগুলোতে জন্মেছেন তাদের জন্যেও।

তাই আমরা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা, আমাদের দক্ষতা এবং আমাদের সংস্থানগুলি সমগ্র মানবতার সাথে ভাগ করে নিব।

বন্ধুরা!

এই বছর আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে রইসিনা সংলাপে অংশ নিয়েছি। আমি আপনাদের সকলকে মানবতাকেন্দ্রিক পদ্ধতির জন্য একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার আহ্বান জানাই।

আমরা যখন পরিকল্পনা-এ এবং পরিকল্পনা-বি ব্যবহার করে অভ্যস্ত হতে পারি, কিন্তু আমাদের কোনও প্ল্যানেট-বি নেই, পৃথিবী আমাদের অদ্বিতীয় গ্রহ। তাই আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমরা এই গ্রহটিকে কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করছি।

আমি আশা করি, এই বিষয়ে আগামী কয়েকদিনে আপনারা অত্যন্ত গঠনমূলক আলোচনা করবেন। উপসংহারে পৌঁছানোর আগে, আমি এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকল সম্মানিত ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

সংলাপের এই অধিবেশনে তাঁদের মূল্যবান উপস্থিতির জন্য রুয়ান্ডার মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং ডেনমার্কের মহামান্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার বন্ধু অস্ট্রেলিয়ার মহামান্য প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা পরবর্তীকালে সংলাপে যোগ দেবেন।

সর্বশেষে সকল সংস্থার কাছে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক অভিনন্দন। তারা বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই বছরের রাইসিনা সংলাপকে বাস্তবায়িত করার জন্য দুর্দান্তভাবে কাজ করেছে।

ধন্যবাদ। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

এস এস