ন্যাভিগেশন মেনু

কাশ্মীরে গুলমার্গে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ স্মরণে চিত্র প্রদর্শনী


নিরীহ কাশ্মীরী জনগোষ্ঠীর উপর পাকিস্তান নেতৃত্বাধীন উপজাতি বাহিনী ও কাবেলিসদের ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর নৃশংস 'অপারেশন গুলমার্গ' বেদনার চিত্র দেখে শিউরে উঠলেন রাজধানী ঢাকাবাসী।

ঢাকাবাসীর মনে উঠে এলো আরও একবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার কথা।কাশ্মীরে সেদিনের ‘কৃষ্ণদিবস’টি স্মরণে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী ও মুক্তমনা বেসরকারী সংস্থাসমূহ (এনজিও)  চারদিনের এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। জম্মু ও কাশ্মীর দখল করতেই পাকিস্তান এ ভয়াবহ হামলা চালায়। গোটা এশীয় উপমহাদেশে সহিংসতা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে পাকিস্তানের সেদিনের ঘৃণ্য নকশাকে উন্মোচিত করতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনা বাহিনী যেভাবে নিরাপরাধ বাংলাদেশিদের ওপর গণহত্যা চালাতে ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে অভিযান চালিয়েছিল, নৃশংস 'অপারেশন গুলমার্গ' তেমনি একই ঘৃণ্য কাণ্ড।

২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় এক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনারা।’৭১ সালের নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হত্যা করেছিল ৩০ লাখ মানুষ ও ১০ লাখ নারীর ইজ্জতহানী করেছিল। পাকিস্তানিদের কাশ্মীরে নৃশংস 'অপারেশন গুলমার্গ' আর ১৯৭১ সালে ঢাকায় তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ একই সূত্রে গাঁথা।

তাই ঢাকায় 'অপারেশন গুলমার্গ' চিত্র প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থীদেরকে ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর ফের নৃশংসতার চিত্র মনে করিয়ে দিল।বীর বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনা বাহিনী ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের নীরিহ নারী-পুরুষদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ২২ অক্টোবর বর্বর পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সাগরেদরা তড়িঘড়ি কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ৪০ হাজারেরও বেশি কাশ্মীরী মুসলমান, শিখ ও হিন্দুকে হত্যা করে।

প্রায় ১০ হাজার নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং ২০০০ নারীকে জোর করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেমনটি তারা করেছিল বাংলাদেশেও।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতিরজনককে সপরিবারে হত্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলা,  ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার ও ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার ভয়াবহ চিত্রসমূহ শাহবাগের জাতীয় যাদুঘরের মূল গেটের সামনে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়।

১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মীর জনগণের ওপর  পাকিস্তানের ইন্ধনে পশতুন উপজাতিদের হত্যাযজ্ঞ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের বাংলাদেশি দালাল- রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসবাহিনীর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের   পঁচিশটি চিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পায়।  

১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মীরের অসহায় নাগরিকের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সমর্থিত উপজাতীয়  দুই হাজার মিলিশিয়া হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। নৃশংস এ দিনটি স্মরণ করে  সারা বিশ্বে ‘কৃষ্ণ দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। ১৯৪৭ সালে  কাশ্মীরীদের ওপর উপজাতিদের ওপর আক্রমণ রাতারাতি ঘটেনি, বরং এটি ছিল কৌশলগতভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা মিশন।

পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরের বেসামরিক লোকজনের সম্পদ ব্যাপক লুটপাট চালায়। এমনকি হাসপাতালগুলিও রেহাই দেওয়া হয়নি। তবে বীর  কাশ্মীরীরাও আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে এগিয়ে গিয়েছিল। কাশ্মীরী জনগণ সেদিন শ্রীনগর বিমানবন্দর দখল করার জন্য পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল।

এই ধ্বংসযজ্ঞের পটভূমিতে, জম্মু ও কাশ্মীরের  মহারাজা হরি সিংহ ভারত সরকারের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছিলেন এবং পাকিস্তান ও তার বর্বর আক্রমণকারীদের হাত থেকে তাঁর রাজ্যকে বাঁচাতে ভারতের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিলেন।এরপরেই ভারতীয় সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে সুরক্ষিত করেছিল জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শহর শ্রীনগরকে।

ভারতীয় সেনাদের প্রতিঘাত পেয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সেনা ও তাদের সমর্থিত কুড়াল, তরোয়াল এবং বন্দুক নিয়ে সজ্জিত হাজারো ‘লস্কর’ । ২৭ অক্টোবর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম পদাতিক বাহিনীর প্রথম শিখ সৈন্যরা শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

কাশ্মীরবাসী সেদিন ত্রাণকর্তা হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কাশ্মীরবাসীকে হানাদার পাক সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করতে ভারতীয়বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ন হন। এমনটাই ঘটেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে ‘মিত্রবাহিনী’ গঠন করে একত্রে লড়েছিল হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে।

নয়মাসের যুদ্ধে অবশেষে বিজয় এসেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ‘পূর্ব পাকিস্তান’ থেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’।  

এস এস