ন্যাভিগেশন মেনু

রাজধানীর দক্ষিণখানে ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন


রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকার একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রকিব উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে লিটন (৪৬) কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত রকিব তার স্ত্রী ও তার সন্তানদের হত্যা করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপির গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিমের ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কায়সার রিজভী কোরায়েশী সংবাদমাধ্যমকে জানান,  ৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেতে লিটনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার মো. মনোয়ার হোসেনের ৮৩৮ নং বাড়ির ৪র্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে হতে পঁচা গন্ধ আসলে দক্ষিণখান থানা পুলিশে খবর দেওয়া হয়। থানা পুলিশ দরজা খুলে ভিতরে অর্ধগলিত এক নারী ও দুই শিশুর মরদেহ পায়। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানা পুলিশসহ উত্তরা অপরাধ বিভাগের বিভিন্ন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তা, পিবিআই, এসবি, র‌্যাব, সিআইডি’র ক্রাইমসিন বিভাগ ও ডিবি উত্তরের বিমান বন্দর জোনাল টিম চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল থেকে হত্যা সম্পর্কে একটি নোট উদ্ধার করে পুলিশ, যা নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। বিমানবন্দর জোনাল টিম উদ্ধারকৃত নোটের লেখা পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ধারনা করে, পলাতক রকিব উদ্দিন ওরফে লিটন-ই তাদের হত্যা করেছে। তখন থেকেই তাকে ধরার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা শুরু করে। অবশেষে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

গ্রেপ্তারকৃত রকিব উদ্দিন আহম্মেদ ট্রিপল মার্ডার সম্পর্কে ডিবি পুলিশকে জানায়, সে নিজেই তার স্ত্রী, তার শিশু পুত্র এবং কন্যা সন্তানকে হত্যা করে পাগলের বেশ ধারণপূর্বক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিলেন।

হত্যার কারণ সম্পর্কে সে জানায়, তার স্ত্রী মুন্নী (৩৭), ছেলে ফারহান (১২) ও মেয়ে লাইবা (৩) কে নিয়ে দক্ষিণখানের ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতো। সে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিঃ (বিটিসিএল)-এ কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক হিসাবে উত্তরায় কর্মরত ছিলেন। মাঝে মাঝে টুকটাক পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলেও সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে একত্রে বসবাস করছিল। 

সে যে এলাকায় থাকতো সেখানে এবং তার অফিসেও তার বেশ সুনাম ছিল। তার নারী বা মাদক সেবনের কোন বদঅভ্যাস ছিলো না। অফিসের সহকর্মীসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সুদের উপর বিভিন্ন সময়ে ধার নিয়েছিল তিনি। অনলাইনে জুয়া খেলে সে সব টাকা নষ্ট করে। এদিকে পাওনাদাররা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে চাপ দিতে থাকে। 

এ কারনে সে বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সাথে খারাপ আচরন করতো এবং গত বছরের ডিসেম্বরে সে কিছু দিন আত্মগোপনে ছিল। তখন তার পরিবার দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন। কিন্তু কিছুদিন পরে সে বাসায় ফিরে আসে। পাওনাদারদের টাকার চাপে সে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন তাকে তার জুয়া খেলার কারণে বিশ্বাস করতো না।

তখন পাওনাদারদের বিভিন্ন চাপের কারণে রকিব উদ্দিনের স্ত্রী মুন্নী ও তার ছেলে ফারহান তাকে বলে, এভাবে বেঁচে থেকে লাভ কি? আমাদের কাউকে দিয়ে মেরে ফেলো, এভাবে বেঁচে থাকতে ভাল লাগে না। পাওনাদারদের চাপ, আত্মীয় স্বজনদের অবিশ্বাস এবং স্ত্রী-সন্তানদের বিভিন্ন কথা তার অসহ্য লাগে।

এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক ১১টায় সে, তার স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে নাস্তা করে। নাস্তা শেষে সে তার স্ত্রী মুন্নীর সাথে গল্প করে। গল্প শেষে দুপুর অনুমান দুপুর ১২.৩০ টায় তার স্ত্রী মুন্নী হালকা ঘুমিয়ে পড়ে। ছেলে ফারহান পাশের রুমে ঘুমিয়ে ছিল এবং মেয়ে লাইবা তার পাশের টিভি রুমে টিভি দেখছিল। 

সে সময়ে হঠাৎ লিটনের মাথায় চিন্তা আসে যে, এই দুনিয়ায় সে তার পরিবারসহ বেঁচে থেকে লাভ কি? বরং তাদের সবাইকে মেরে সে নিজে আত্মহত্যা করলে তার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা সন্তানসহ সে নিজে পাওনাদার ও অন্যান্য দুনিয়ার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবে। তখনই সে তার বাসায় থাকা হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে তার স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে এবং গলা চেপে মেরে ফেলে। এরপর সে তার  মেয়ে ও ছেলেকে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস আটকিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।

পরে বিকাল অনুমান চারটার দিকে লিটন বাসায় তালা দিয়ে বের হয়ে রেল লাইনে যায়। ট্রেনের নীচে পড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে কিন্তু সে আত্মহত্যা করতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় পাগলের মত ছদ্মবেশ ধারণ করে ঘুরতে থাকে।

এডিবি/