ন্যাভিগেশন মেনু

রাজশাহী মুক্ত দিবস স্মরণে সমাবেশ


যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী মুক্ত দিবস পালন করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ।

২০০৬ সাল থেকে সংগঠন দু’টি রাজশাহী মুক্ত দিবস পালন করে আসছে। বিস্তারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট প্রেসক্লাব চত্বর এলাকায় স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণ সমাবেশে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত কুমার সাহা।

এছাড়া আলোচনা রাখেন- রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য গোলাম সারওয়ার, মহানগর সেক্টর কমান্ডার ফোরাম সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, আশির দশকের ছাত্রনেতা জাসদ মহানগর শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম হিটলার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল আনসারী, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আবু সালে মো ফাত্তাহ, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ সহ-সভাপতি ও মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন মিন্টু, বিটিসি নিউজ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান রেজা, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ চাই’র সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত সৈকত ও শহীদ পরিবারের সদস্য ডা. রোকনুজ্জামান রিপন।

আরো উপস্থিত ছিলেন-জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক দুখু, বিটিসি নিউজের বার্তা সম্পাদক রাকিবুল হাসান শুভ,  ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আহবায়ক ইউসুফ আলী, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুনসুর রহমান মিঠু, ১০ নম্বর হাসিবুর রহমান নাহিদ, সাংবাদিক আমানুল্লাহ আমান, দৈনিক ভোরের কাগজের ফটোসাংবাদিক রফিকুজ্জামান রানা, ফটোসাংবাদিক আল আমিন প্রমুখ।

এদিকে, সকালের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান।

প্রসঙ্গত,  ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের দিন, অহংকারের দিন। কিন্তু রাজশাহীতে স্বাধীনতার সেই সূর্যকিরণের ছোঁয়া লাগে আরও দুদিন পরে। ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী শহর শত্রু মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা কোনঠাসা হয়ে পড়লেও রাজশাহীতে স্বাধীন দেশের প্রথম  পতাকা উড়ে আরও দুইদিন পর।

দীর্ঘ নয় মাস বিভীষিকাময় সময়ের অবসান ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী অঞ্চল ছিল ৭ নম্বর সেক্টরে। বিদেশি প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। একাত্তরের ১৭ জুন ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শুরু করে তাদের অ্যাকশন অপারেশন। পাকিস্তানি সৈন্য ও দোসরদের নির্যাতন হত্যাযজ্ঞ বাড়তে থাকে। রাজশাহীর  নারীররাও অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।

মহদিপুর সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে শহিদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদাপাগড়ি ও সমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীরদর্পে প্রবেশ করে।

১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী মুক্ত দিবসের ঘোষণা দেয়ার জন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জননেতা আতাউর রহমানের (পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের গভর্নর) সিপাইপাড়াস্থ বাসভবনে। সভা থেকে মাদরাসা মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে মুক্তদিবসের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সাথে ওই বাড়িতে কনট্রোলরুম খোলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

পরে জননেতা আতাউর রহমানের বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা মিছিল নিয়ে ধাবিত হয় রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের দিকে। জয়বাংলা গানে মুখরিত হয় চারদিক।

এরপর মাদরাসা ময়দানে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলেন লাল গোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। ঘোষণা দেন আজ থেকে রাজশাহী ও রাজশাহীর মানুষ মুক্ত।

ওয়াই এ / এস এস