টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছেন রুপার পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনার চত্বরে রুপার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে রুপার মা হাসনা হেনা, দুই ভাই হাফিজুর প্রামানিক ও রুম্মান প্রামানিক উজ্জল ও তার স্ত্রী টুম্পা প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন।
রুপার বড়ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, গত চার বছরেও তাদের পরিবার রুপা হত্যার বিচার না পেয়ে পরিবারসহ সচেতন দেশবাসী হতাশ হয়েছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমার সম্ভবনাময় মেধাবী বোন রুপার অকাল মৃত্যু হয়েছে। আমার একমাত্র কর্মক্ষম বোন রুপাকে হত্যা করায় আমরা অর্থনৈতিক দৈনতায় পত্রিকা বিক্রি করে বর্তমানে সংসার চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, 'বারবার হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দাবি জানালেও তা আজও পুরণ হয়নি। গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ হাইকোর্টে আপিল শুনানি ঝুলে আছে। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রুপা হত্যার বিচারের বাণী নিভৃতেই কাঁদছে।'
মানববন্ধন কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুপার বৃদ্ধ মা হাসনা হেনা বলেন, 'আমার মেয়ে হত্যার বিচারের মাধ্যমে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়া জরুরি। যাতে দেশের আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয় এবং আমার মেয়ের মতো নরপশুদের খপ্পরে পড়ে সম্ভ্রম ও জীবন হারাতে না হয়। মেয়ে হারানোর বেদনা যে কতো যন্ত্রনাময় সেটা আমিই বুঝি।'
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসান বাড়ী গ্রামের মৃত.জেলহক প্রাং এর মেয়ে মেধাবী তরুনী রুপাকে চলন্তবাসে গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে পরিবহণ শ্রমিকরা। পরে চলন্ত বাসেই তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়।
পরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রুপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরের দিন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে ছোট বোন রুপার লাশ শনাক্ত করেন।
২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর নিম্ন আদালতে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চার আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হওয়ার পর তারা জেলে রয়েছেন।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডপ্রাপ্তরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর গত ৪২ মাসেও চাঞ্চল্যকর রুপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার আপিল শুনানি শুরুই হয়নি।
এমএসএম/এসএ/এডিবি/