ন্যাভিগেশন মেনু

রেলপথের দুর্দশায় খুড়িয়ে চলছে বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম


বেনাপোল স্থলবন্দরের পাশাপাশি রেল পথেও আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও অবকাঠামাগত উন্নয়ন সমস্যায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে রেলপথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম।

এতে লোকশানের কবলে পড়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তেমনি সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো কন্টেইনার টার্মিনাল, রেলপথ ও পর্যাপ্ত বগি-ইঞ্জিন বৃদ্ধি করলে এপথে বাণিজ্য আরো বাড়বে। সাথে বাড়বে রাজস্ব।

আর রেল কর্তৃপক্ষ তাদের দূর্বল অবকাঠামোর কথা  স্বীকার করে বলছেন, বিষয়টি উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। খুব দ্রুত এসব অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থাপন হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারনেই মুলত এপথে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম থেকে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যা বাণিজ্য বিস্তারে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৯৯ সালে বেনাপোল রেল পথে ভারতের সাথে আমদানি বাণিজ্য শুরু হয়। সড়কে যানজটসহ বিভিন্ন ভোগান্তির কারনে দিন দিন রেলপথে বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। কিন্তু বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে সংকীর্ণ রেলপথ ইয়ার্ড ও পর্যাপ্ত বগি ইঞ্জিন না থাকায় পণ্য নিয়ে রেল কার্গো দিনের পর দিন দাড়িয়ে থাকে। এতে অনেকে বাধ্য হয়ে এপথে বাণিজ্য কমিয়েছেন। গত এক বছরে এ পথে রেল কার্গোতে ভারত থেকে মাত্র ১২ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় এক কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পথে বেশির ভাগ শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও খাদ্য দ্রব্য আমদানি হয়ে থাকে। বেনাপোল ষ্টেশনে পণ্য খালাসের কোন ব্যবস্থা নেই। বেনাপোল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নওয়াপাড়ায় নিয়ে পণ্য খালাস করতে হয়। এতে যেমন দ্রুত পণ্য সরবরাহ মারাত্বক ভাবে বিঘ্ন ঘটছে তেমনি বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ভোগান্তির কারনে অনেকে এ ষ্টেশন ছেড়ে অন্য ষ্টেশনে চলে গেছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সমস্যার কথা ব্যবসায়ীরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।

পণ্যবাহী ভারতীয় রেল ওয়াগন পরিচালক উত্তম মল্লিক জানান, বেনাপোল রেলস্টেশনে পর্যাপ্ত ইয়ার্ড না থাকায় তারা মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে না। রেল পথে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে জরুরী ভিত্তিতে ইয়ার্ড ও রেলপথের উন্নয়ন প্রয়োজন।

ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স সাব কমিটি পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা সহজিকরণের মাধ্যমে বেশি করে পণ্য আমদানি করতে চায়। যেহেতু বাংলাদেশ রেলের অভিজ্ঞতা আছে তারা আইসিডি পরিচালনা করছে। সেখানে তাদের অগ্রাধিকার দিলে এটা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ভারতীয় অর্থায়নে ভারত সরকারও এগিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।

একটি যদি ৪০টি ওয়াগান বা কন্টেইনার বহন করতে পারে ৪০ বা ২০ ফিটের সেগুলো বেনাপোলে আসার পর বেনাপোল কাস্টম থেকে এ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করে সেই কন্টেইনার ক্রেণ দিয়ে নামিয়ে ট্রাকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানিকারকের কাছে পৌছাতে পারবে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। সেই সাথে খরচও কমে যাবে বলে জানান তিনি।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক জানান, ব্যবসায়ীরা হয়রানি ও দূর্ভোগ ছাড়া বাণিজ্য করতে চায়। বেনাপোল ষ্টেশনে কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার সাথে কলকাতার ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ পথে আমদানি বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি বাণিজ্য সহজিকরণ হবে। 

বেনাপোল স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান বলেন, বেনাপোল রেলস্টেশনে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধানে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ইঞ্জিন ও ইর্য়াডের সমস্যা আছে। যদি ইর্য়াডের লাইন বাড়ানো থাকতো তাহলে বেশি পণ্য রেলওয়ের মাধ্যমে আমদানি করা যেত।

এস এ / এস এস