ন্যাভিগেশন মেনু

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরায় জটিলতা,এনজিওগুলোকে দুষল ঢাকা


শেষ মুহূর্তে এসে তরী ডুবল। ২২ আগস্ট থেকে স্বদেশে রোহিঙ্গাদের ফেরার কথা ছিল। চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসন হয়েও হল না। বাংলাদেশ এজন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা – এনজিও এবং  মায়ানমারকে দুষল। 

এর আগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার নিতে গেলে এনজিওগুলো প্রতিবাদ জানায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সেখানে সুসজ্জিত ও আধুনিক হোটেল নেই। তাদের থাকার অসুবিধা হবে।

তাই তারা বিরোধিতা করছে। যাইহোক, আবারো আশা নিয়ে আবারও মায়ানমারের সঙ্গে  বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। এ বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে চীন। বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন,  কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সমন্বয়কারী প্ল্যাটফর্মকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী ভূমিকার বিষয়ে সতর্ক করেছে সরকার।

এনজিও প্ল্যাটফর্ম কোঅর্ডিনেশন'-এর কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ডমিনিকা আরসেনিক বৃহস্পতিবার এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর কার্যালয়ে সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এ সময় সংস্থাগুলো দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী কাজে লিপ্ত নয় বলেও তাদের পক্ষে জানানো হয়েছে।

এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত 'এনজিও প্ল্যাটফর্ম কোঅর্ডিনেশন' থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল  এদিন তার কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে আসে। এ সময় তাদের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী ভূমিকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারা এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোনো এনজিও এ ধরনের কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিষয়ে তথ্য দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ রকম কোনো তালিকা পেলে তাৎক্ষণিক সংশ্নিষ্ট এনজিওর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনজিও ব্যুরোর রোহিঙ্গা সেলের আহ্বায়ক ও সংস্থার উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত সব এনজিওর প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যুরোর সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে এনজিও প্ল্যাটফর্ম থেকে।

এ বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসন এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রতিনিধিকেও রাখতে বলেছি। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে গত ২১ আগস্ট বিবৃতি দিয়েছে ৬১টি সংস্থা।

এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে তাগিদ দেওয়া হয়। মুক্তি এনজিওর ৬ প্রকল্প স্থগিত : রোহিঙ্গাদের জন্য 'ধারালো অস্ত্র' তৈরির অভিযোগ ওঠায় মুক্তি কক্সবাজার নামে একটি এনজিওর ছয়টি প্রকল্প সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো।

সম্প্রতি কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশে তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখার পর আলোচনার মধ্যে এ পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম।

এনজিও ব্যুরোর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের জন্য এনজিও ব্যুরোর অনুমোদনহীন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হাতিয়ার (ছয় হাজার নিড়ানি) তৈরির কারণে মুক্তি কক্সবাজারের চলমান প্রকল্পের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার সাংবাদিকদের জানান, তাদের ৩০টি প্রকল্প চলমান। তার মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে কৃষি উপকরণ হিসেবে নিড়ানি তৈরির অর্ডার দিয়েছিলাম।

এ কাজ যাকে দেওয়া হয়েছিল, তিনি কোথায় বানাতে দিয়েছেন, জানি না। ওই লোক এখন বলেছে, উখিয়ায় এসব তৈরি করেছে। বিমল চন্দ্র দে বলেন, এসব নিড়ানি এখনও গ্রহণ করিনি, বিতরণও করা হয়নি।

তিনি বলেন, এক বছরের জন্য ছয়টি প্রকল্পে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার কাজ করার কথা। দুই লাখ টাকায় এসব নিড়ানি তৈরি করা হচ্ছিল। তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ঝুঁকিপূর্ণ হাতিয়ার বা অনুমোদনহীন কিছু বিতরণের প্রশ্নই ওঠে না।

  মায়ানমারের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘ দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। চীনের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা মায়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের জানাবেন।

 বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যুর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি। বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্রিফিং শুরু হয়।রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভূমিকা চায় বাংলাদেশ।

বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংকালে ওই প্রত্যাশার কথা জানান। এদিকে দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর চীন বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে নিয়ে  ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রকে বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

বিদেশ মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, চীন মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশকে বৈঠকের ব্যাপারে জানাবে। বিদেশ মন্ত্রী বলেন, গত ২২ আগস্ট একজন রোহিঙ্গাও মায়ানমারে ফিরে না যাওয়ায় মায়ানমার বাংলাদেশকে দায়ী করেছে। বাংলাদেশ  বিদেশি কূটনীতিকদের বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফেরত যেতে রাজি করানোর দায়িত্ব মায়ানমারের।

বিদেশমন্ত্রী বলেন, মায়ানমার বারবার বাংলাদেশের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ সেখানে গেলে হবে। তাই যদি হয় অন্যদের নিয়ে তারা তা দেখায় না কেন? রোহিঙ্গারা মায়ানমারে ফেরার জন্য বেশ কিছু দাবি তুলেছে।

এগুলো পূরণের ব্যাপারে মায়ানমারের চিন্তাভাবনা করা উচিত বলেও বাংলাদেশ  ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে। বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৩০ হাজারের অধিক মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বর্বর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

মায়ানমারের এই মুসলিম জাতিগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ ছিল বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের তদন্ত কমিটি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে।

পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে চুক্তি করে। ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতি খুবই সামান্য।রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের আগে যাচাইয়ের জন্য ২৯ জুলাই ছয় হাজার পরিবারের ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পেয়েছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মাত্র ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে ছাড়পত্র দিয়েছে।