ন্যাভিগেশন মেনু

১৪ ডিসেম্বর

শত্রুমুক্ত হতে থাকে ঢাকা সংলগ্ন এলাকাসমূহ


বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে বাঙালি জাতিকে চিরতরে মেধাশূন্য ও পঙ্গু করে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়।

অবশ্য এদিন বিভিন্ন রণাঙ্গনে ক্রমাগত উড়তে থাকে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। শত্রুমুক্ত হয় ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের পূবাইল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বৈদ্যের বাজার, বগুড়া জেলার শেরপুর ও শিবগঞ্জ থানাসহ জেলা শহরের একাংশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ এলাকা, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবিসহ জয়পুরহাট জেলা, যশোরের কেশবপুর, রংপুরের মিঠাপুকুর, চট্টগ্রামের বান্দরবান, চান্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া ও কুমিড়া, ব্রাহ্মবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল প্রভৃতি এলাকা।

সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান এদিনই  পূর্বাঞ্চলীয়  দখলদার বাহিনী প্রধান নিয়াজী ও গভর্নর ডা. মালিকের কাছে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এক তারবার্তা পাঠালে চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে দখলদার বাহিনীর মনোবল।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের প্রাক্কালে এ দিন মুক্তিযুদ্ধের যৌথ কমান্ড মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে রাজধানী ঢাকা।

দখলদার পাক বাহিনীর সব কয়টি ডিভিশন ইতিমধ্যেই সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

হানাদারদের উত্তর সেক্টরের ময়মনসিংহ ব্রিগেড ঢাকার পথে পশ্চাদপসরণ করলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা পৌঁছাতে পারেনি। তারা জয়দেবপুরে আটকে পড়ে।

মিত্রবাহিনীর অবস্থানের কারণে দখলদার বাহিনীর উত্তর-পশ্চিম সেক্টরের ১৬তম ডিভিশন কিংবা পশ্চিম সেক্টরের ৯ম ডিভিশন কারো পক্ষেই পশ্চাদপসরণ করেও ঢাকার ডিফেন্সে এগিয়ে আসার কোনো পথ ছিল না।

তাদের প্রতিটি ডিভিশন ইতিমধ্যে যৌথ বাহিনীর আক্রমণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ইস্টার্ন কমান্ডের কিছু সেনা ঢাকায় আসতে পারলেও তাদের অধিকাংশ সেনা ইতিমধ্যে যৌথ বাহিনীর হাতে বন্দি হয়। বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে একের পর এক পরাজয়ের সংবাদে দখলদার বাহিনী তখন দিশেহারা ও পরাজয়ের আশঙ্কায় ভীত এক বাহিনী।

১৪ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনী যখন ঢাকায় নির্দয়ভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করছে, ঠিক তখন যৌথ বাহিনী ঢাকার উপকণ্ঠে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে পৌঁছে গেছে। পশ্চিম ও পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে ঢাকাকে ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনী তৈরি করে কালিয়াকৈর-সাভার-মিরপুর-ঢাকা বেষ্টনী।

অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধারা ১৪ ডিসেম্বর রাতে পৌঁছে যায় ঢাকার বাসাবোতে এবং দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দল ডেমরায়।

মিত্রবাহিনীর কাছে খবর পৌঁছায় যে, চতুর্মুখী আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও হানাদার বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে ১৪ ডিসেম্বর গভর্নর হাউসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন। মিত্রবাহিনী ওই বৈঠক পণ্ড করার লক্ষ্যে ঢাকায় গভর্নর হাউসে বিমান হামলা চালায়।

এ হামলায় গভর্নর হাউস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপায়ন্তর না দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রিপরিষদ পদত্যাগ করে। এসময় চট্টগ্রামে দখলদার বাহিনীর কামানের অবস্থানসহ গ্যারিসন, ওয়্যারলেস স্টেশন, জ্বালানি ডিপো ও বন্দরসমূহের ওপর ভারতীয় নৌ-বাহিনীর ক্রমবর্ধমান বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

ওআ/ এস এস