ন্যাভিগেশন মেনু

শান্তিপূর্ণ সমঝোতা ব্যর্থ হলে যুদ্ধে প্রস্তুত তালেবান বিদ্রোহীরা


আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা ব্যর্থ হলে কোনও ধরনের আগ্রাসন মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল রেসিস্টেন্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তানের (এনআরএফ) বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আলী নাজারি।

তিনি বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চাই। কিন্তু যদি তা ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা কোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেবো না।'

আলী নাজারির দাবি, তাদের হাজার হাজার যোদ্ধা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

এদিকে তালেবান জানায়, কাবুলের ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে পাঞ্জশির উপত্যকায় শত শত যোদ্ধা পাঠাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ২০ বছর আগে তাদের শাসনামলে ওই জায়গার এক স্থানীয় যুদ্ধবাজ নেতা তাদের শাসন প্রত্যাখ্যান করেছিল, তার ছেলের প্রতিরোধ সংগ্রামকে নিশ্চিহ্ন করা।

গত সপ্তাহে, প্রবল প্রতিরোধের প্রথম অংশ হিসেবে, তালেবানবিরোধী যোদ্ধারা আন্দারাব সংলগ্ন তিনটি শহরের দখল নেয়, এসব শহরগুলি পাঞ্জশির উপত্যকার কাছেই অবস্থিত। তবে তালেবান গোষ্ঠী সোমবার তিনটি শহরই পুনরায় কব্জা করেছে বলে দাবি করে।

তালেবান জানায়, পাঞ্জশির উপত্যকায় এই গোষ্ঠীটির শক্তিশালী ঘাঁটি তারা ঘিরে ফেলেছে এবং বিরোধীদেরকেও ঘেরাও করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী কাবুলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে এখন অগ্রসর হচ্ছে তালেবান।

তালেবানের হাতে ক্ষমতা হারানো আফগান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এখন পাঞ্জশিরে রয়েছেন।

আমরুল্লাহ সালেহ এক ট্যুইট বার্তায় জানান, তালেবান যোদ্ধারা ওই উপত্যকার প্রবেশমুখে তাদের বাহিনী জড়ো করছে।

তবে হামলা ঠেকানোর জন্য পাঞ্জশির অঞ্চল, বিশেষ করে পাঞ্জশির উপত্যকার সুনাম রয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সেনাদের হঠানো এবং ১৯৯০ এর দশকে তালেবানদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য ওই অঞ্চল বিখ্যাত।

এখনও, ওই অঞ্চলটি এনআরএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আফগান প্রতিরোধের নায়ক বলে পরিচিত আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ। আহমদ শাহ মাসুদ ছিলেন একজন শক্তিশালী গেরিলা কমান্ডার। তিনি পাঞ্জশিরের সিংহ নামে খ্যাত। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আহমদ শাহ মাসুদ। এরপর তিনি ১৯৯০-এর দশকে বিদ্রোহী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরও ২০০১ সালে তাকে হত্যার আগ পর্যন্ত তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন প্রধান বিরোধী কমান্ডার।

নাজারি বিবিসি রেডিও ফোর-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেছিলেন, সারা দেশ থেকে স্থানীয় যোদ্ধারা পাঞ্জশিরে জড়ো হচ্ছেন। তারা এরইমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এমন যোদ্ধাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই গোষ্ঠীর আওতায় ‘প্রতিরোধের জন্য হাজার হাজার বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে’।

এই মুখপাত্র বলেন, ‘যাই হোক না কেন, কোনও ধরনের যুদ্ধে যাওয়ার আগে আমরা শান্তি এবং সমঝোতার চেষ্টা করবো।’

এনআরএফ- এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো দেশে বিকেন্দ্রীকৃত একটি শাসন প্রতিষ্ঠা।

তিনি বলেন, ‘এনআরএফ বিশ্বাস করে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আফগানিস্তানের অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো সামনে আনতে হবে। আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যেটি জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত এবং সেখানে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। এটি একটি বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র, তাই এখানে ক্ষমতার বণ্টন দরকার। এই বণ্টনটা এমনভাবে হতে হবে যাতে সবাই নিজেদের ক্ষমতায় দেখতে পায়।’

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাগলান প্রদেশের আন্দারাবে নিয়মিত আফগান সেনা ইউনিটের অবশিষ্টাংশ, স্থানীয় মিলিশিয়া যোদ্ধা সম্বলিত আহমেদ মাসুদের ন্যাশনাল রেসিসস্ট্যান্স ফ্রন্ট (NATIONAL RESISTANCE FRONT) বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সংঘর্ষের কয়েকঘন্টা পর এইসব তালিবান যোদ্ধাকে পাঠানো হচ্ছে।

ব্রিটেনের স্যান্ড হার্স্ট মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং লন্ডনের কিংস কলেজে যুদ্ধবিদ্যায় প্রশিক্ষিত তার ৩২ বছরের ছেলে আহমেদ মাসুদ তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাইছেন।

সিবি/এডিবি/