ন্যাভিগেশন মেনু

শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস-এর সেবার নমুনা!


সর্বোচ্চ সেবাদানের অঙ্গীকার করে অতি নিম্নমানের সেবা দিয়ে যাত্রীদের নিত্য ঠকিয়ে চলেছে শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস। নির্ধারিত সময়ে বাস না ছেড়ে যাওয়া যেন নিত্য একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যাত্রীরা যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তা নিয়ে তাদের কোন হেলদোল নেই।

শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস’র টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বরত কর্মচারীদের কথায় রাতে তাদের দু’টি বাস সরাসরি কলকাতার উদ্দেশ্যে ঢাকার দু’টি কাউন্টার থেকে ছেড়ে যায়।

রাত পৌনে ১১টার বাসটি ঢাকার নটরড্যাম কলেজের বিপরীত ‍দিকের মতিঝিল কাউন্টার থেকে ছেড়ে যায়।  এ বাসটি কেবল সরাসরি কলকাতা যায়। তবে বাসটি বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছালে সব যাত্রীকে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে নামতে হয়। ব্যাগ-ব্যাগেজ নিতে কোন সহায়তা দেয় না তারা। যাত্রীদের এরপর নিজেদের উদ্যোগে বেনাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কাজ সমাধা করে তবে ভারতের হরিদাসপুর যেতে হয়।

এরপর হরিদাসপুর সীমান্তেও একইভাবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সেরে ঢাকা থেকে যাওয়া বাসে গিয়ে উঠতে হয়। এক্ষেত্রে মাল পরিবহন যাত্রীকেই করতে হয়। অথচ শ্যামলী এনআরের অন্য কলকাতা যাওয়া কাটা সার্ভিস বাসে মাল পরিবহন তাদের কুলি দিয়ে করে থাকে। যদিও যাত্রীদের কুলিকে কিছু নজরাণা দিতে হয়। না দিয়ে উপায় থাকে না। কুলিরা জোর-জবরদস্তি করে নিয়েই তবে ছাড়ে।

আর রাত ১১টার বাসটি কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করে। এ বাসটি বেনাপোল যায়। এরপর বেনাপোল ও হরিদাসপুরে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সেরে অন্য বাসে করে যাত্রীদের কলকাতা নিয়ে যায়।

এবার শ্যামলী বাস কর্তৃপক্ষের কথার বর খেলাপ ও হয়রানির আসল চিত্র। আমার এক আত্মীয় নারী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার কলকাতার বাসে টিকিট কেটেছিলেন কমলাপুর বাস কাউন্টার থেকে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাত্রীকে জানালো হলো এ বাসটি লেট হবে- সাড়ে ১১টায় ছাড়বে। তাকে সেভাবে যেতে বলা হলো। যাইহোক তিনি সোয়া ১১টায় মতিঝিল বাস কাউন্টারে হাজির হলেন। সাড়ে ১১টায় বাসটি না আসার কারণ জিঞ্জেস করে জানা গেল লেট আছে- ১০/১২ মিনিট বাদেই আসবে।

দেখা গেল ওই কাউন্টারে বসার আসন থেকে অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন বাসের অপেক্ষায়। কী আর করা বাঁধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা। বেশি দামে টিকিট কেটেও সাধারণ মানের চেয়েও নিম্নতর সেবা। এতো যাত্রী তবু ছোট একটি কক্ষে গিজ গিজ করা যাত্রীতে ঠাসা। ভেতরে বসার ব্যবস্থার অভাব। তাই শীতের রাতেও বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা।

এদিকে বাস লেট দেখে কাউন্টারে কয়েকবার জিঞ্জেস করে উত্তর মিলল- এই তো আসছে। প্রচণ্ড শীতের রাতে এইভাবে কেটে গেল পৌনে দুই ঘণ্টা। বাসে ওঠার কথা পৌনে ১১টা। এরপর  সাড়ে ১১টা। এরপর বাস এলো রাত ১টায়।

তবে এরমাঝে যাত্রীদের বলা হলো সবাইকে কমলাপুর থেকে বাসে উঠতে হবে । কিন্তু কোন যাত্রী এতে রাজি হননি। এমন ঘটনা শুধু এবারেই নয়।

গত আগস্ট মাসে রাতেও ওই যাত্রীটি এমনিতরো ফেরে পড়েছিলেন। রাত ১০টার বাসে ওঠার জন্য তিনি মতিঝিল কাউন্টারে  এসে শুনলেন বাসে উঠতে হবে  ঢাকার শ্যামলী কাউন্টার থেকে। এখানে বাস আসবে না। শেষে সিএনজি করে শ্যামলী গিয়ে বাসে উঠতে হয়েছে।

যাইহোক, মঙ্গলবার রাত একটায় বাস ছেড়ে ভোর ৪টায় গিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছালো। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ। অতএব আরেক দফা অপেক্ষার পালা। কুয়াশা কেটে ফেরি চালু হলো সোয়া ৯টায়।

এ বাসটি দু’দেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচল করে বিধায় ফেরিতে সরাসরি গিয়ে ওঠে। অন্য বাসের মতো ঘাটে সিরিয়াল নিয়ে বসে থাকতে হয় না।

কিন্তু এদিন ভোরে এ বাসটি ফেরিতে উঠতে গিয়ে অন্য বাসের যাত্রীদের রোষানলে পড়ে। অন্য বাসের যাত্রীরা কোনভাবেই এ বাসটিকে ফেরিতে উঠতে দিতে চাচ্ছে না। তারা বাসে দমাদম থাপরিয়ে কিল-ঘুসি মেরে হৈ-হট্টগোল করছেন। এ  দেখে এগিয়ে আসে পুলিশ। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপে রক্ষা। বাস ঊঠলো ফেরিতে।

কেন জানি বাসটি পুরানো বিধায় জোরে চলার শক্তি কম। সাত ঘণ্টা সময় নিয়ে বাসটি ৪টায় গিয়ে পৌঁছালো বেনাপোলে।

কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সেরে যাত্রীরা পেট্রাপোলে পৌঁছালেন সাড়ে ৪টার দিকে। কিন্তু ওপারে ইমিগ্রেশনে বিশাল ভীড়। লাইনে ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৮টায় ইমিগ্রেশনের সিল পড়ল।

কিন্তু পেট্রাপোলে যাত্রীরা গিয়ে হতবাক। দেখেন ঢাকা থেকে যাওয়া বাসের বদলে অন্য একটি তুলনায় খারাপ একটি বাস অপেক্ষা করছে। তাতেই উঠতে হলো নিরুপায় যাত্রীদের। চলতে শুরু করলো কাঙ্খিত কলকাতার উদ্দেশে। ৬৫ কিলোমিটার পথে দু’বার থামলো বাসটি যাত্রীদের আপত্তি  সত্বেও।

বনগাঁও পার হয়ে হাবড়া গিয়ে চালক বাসটি থামালেন। কেননা তারা রাতের খাবার খাবেন সেখানে। সেখানে আবার আধাঘণ্টা বিরতি। এরপর আবার বাস গিয়ে থামলো বারাসাতে নিম্নমানের একটি রেস্টুরেন্টের সামনে। কেননা বাসের চালক-হেলপার জলখাবার গ্রহণ করবেন। এ রেস্টুরেন্টে শুধু রুটি আর সবজি মেলে।

বাসের চালক-হেলপার যাত্রীদের তাগাদা দিচ্ছেন খেয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু যাত্রীরা তখন উদগ্রীব কখন তারা কলকাতায় পেীঁছাবেন। কেননা অনেকেই রাতের দিকে রেল ও বিমানের টিকিট কেটে রেখেছেন চেন্নাই ও ভেলোরে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য।

শ্যামলী এনআর বাস কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে তিনজন চেন্নাইগামী যাত্রী তাঁদের বিমানের সিডিউল ফেল করলেন। এর কী উত্তর আছে শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস-এর।

সাধারণত: এ বাসটি ভোর সাড়ে ৫/৬টায় গিয়ে বেনাপোল পৌঁছায়। সকাল ৭টার মধ্যে কাস্টমস/ইমিগ্রেশন সেরে যাত্রীরা বাসে উঠে সাড়ে ১০টা কী ১১টার মধ্যে কলকাতায় গিয়ে পৌঁছান। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বাসটির কর্মচারীদের অবহেলায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এস এস