ন্যাভিগেশন মেনু

সেতুর আশায় স্বেচ্ছাশ্রমে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলো গ্রামবাসী


নাটোরের গুরুদাসপুরে মাত্র ২০০ ফুট সংযোগসড়ক আর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ৪০ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন গ্রামবাসী। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। শেষে নিজেরাই উদ্যেগ নিয়ে ছয় লাখ টাকায় জায়গা কিনে শুধু একটি সেতুর আশায় স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করলেন সংযোগ সড়ক।

এটি কোনো গল্প নয়। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষের চেষ্টায় তৈরি হয়েছে এই সড়ক। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো বাধাই যে দমিয়ে রাখা যায় না, তার প্রমাণ সাড়ে চারশ মানুষের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে তৈরি রাস্তাটি সবার জন্যই দৃষ্টান্ত।

একটি সেতু আর সংযোগ সড়কের আক্ষেপ প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যাবেষ্টিত এই বিলহরিবাড়ী গ্রামের উত্তরপাড়ের অধিবাসীদের। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের দুঃখগাঁথা পৌঁছায়না উচ্চ পর্যায়ে।

স্থানীয়রা জানান, প্রবাহমান একটি নালা বিলহরিবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গ্রামটি হরদমা এবং বিলহরিবাড়ি নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে।  দুর্গাপুর-যোগেন্দ্রনগর রাবারড্যাম হয়ে একটি পাকা সড়ক ওই নালার দক্ষিণপাড়ে এসে শেষ হয়েছে। নালার উত্তরপাড়ে জনবহুল বিলহরিবাড়ী গ্রাম। আর  দক্ষিণপাড়ে হরদমা গ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা, কবরস্থান ও বাজার। সুবিধাবঞ্চিত এ উত্তরপাড়ের মানুষদের শিক্ষা, লাশদাফন, চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রয়োজনে দক্ষিণপাড়ের এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। কাঁচা সড়কের কাঁদা মারিয়ে ওই নালাটি খেয়া নৌকায় পাড় হয়ে তারা দক্ষিণপাড়ে আসেন।

একইভাবে উওরপাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মাধ্যমও একটি খেয়া নৌকা।

স্থানীয়রা আরও জানান, উত্তরপাড়ের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে অতিকষ্টে তিন কিলোমিটার কাঁদাযুক্ত কাঁচা রাস্তা ও ওই নালা পারাপার হয়ে থাকেন। যুগ যুগ ধরে এভাবেই দূর্ভোগ নিয়ে পারাপার হলেও জনপ্রতিনিধিরা কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরন ও সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু আশ্বাসেই শেষ, এলাকাবাসীর ভাগ্যেন্নোয়নে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি নির্মিত হয়নি।

বিলহরিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ক্ষুদেশিক্ষার্থী, আরিফুল, সান্তা, মরিয়ম, আঁখি ও শাপলা জানায়, বিদ্যালয়ে যেতে কাঁচা রাস্তা ও খেয়া নৌকায় পাড় হতে হয়। কাঁদাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় পা পিছলে পড়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন বাড়তি পোষাক নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসে।

ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কম হয়। ওই নালার ওপর সেতু না থাকায় বর্ষাকাল ও শুষ্ক মওসুমেও খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রী পারাপার হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কারনে কৃষকদের পণ্য পরিবহনে অসহনীয় ভোগান্তি হয়। বিশেষ করে ইরি-বোরো মৌসুমে ধানবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি কোন রকমে সড়ক বয়ে আসলেও ওই নালা পারাপারে দুর্ভোগে পড়ে। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ওই কাঁচা রাস্তা এবং সেতু নির্মাণের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’ 

বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সেতু না থাকায় ছোট একটি খেয়া নৌকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ  বিলহরিবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হন। তাছাড়া রাস্তাটি কাঁচা আর নিচু হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। এতে এই গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করেন। বরাদ্দ পেলে ওই গ্রামের মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরনের চেষ্টা করবো এবং সেতু নির্মাণের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবগত করা হবে।’

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ‘ওই এলাকার যাবতীয় উন্নয়নমুলক কাজ করে দিয়েছি। সেতুর বিষয়টিও সময় মতো দেখা হবে।’

সিবি/এডিবি/