ন্যাভিগেশন মেনু

‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অপূরণীয় অধঃপতনের পিছনে ২১ আগস্টের ঘটনা বিশেষভাবে দায়ী’


যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অপূরণীয় অধঃপতনের পিছনে ২১ আগস্টের ঘটনা বিশেষভাবে দায়ী। 

শুক্রবার (২০ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক স্মরণ সভার আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরে উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সকল শহীদ-স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি মিছিলে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায়। যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড শান্তি মিছিলে ব্যবহার পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘৃণিত কাজ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। সে দিন আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী নিহত এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। সেদিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কেন হয়েছিল? কারণ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা, যেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, যাতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর কোন দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে, যেন এদেশটি আইএস আই নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানী ভাবধারায় তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যা করা ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা। যাতে করে খালেদা জিয়া তার কুলাঙ্গার সন্তান তারেক জিয়া ও তার গংরা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যাতে করে বিএনপি জামাত আজীবন ক্ষমতায় থেকে বিদেশি প্রভুদের অধীনে থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধকন্যা যদি বেঁচে থাকে সেটা কোন দিনও সম্ভব হবে না, আওয়ামী লীগ থাকতে কোন দিনও সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ফলশ্রুতিতে আমরা কী দেখলাম? আমরা দেখলাম বাংলাদেশকে বর্হিবিশ্বে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনের একমাত্র কারণ এই গ্রেনেড হামলা। এর পরিণতি বিএনপি-জামাত কোন রাজনৈতিক দল নয়, একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যেসকল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, কিভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিলাম। সেদিন হারিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্যকে। কী দোষ করেছিলাম আমি? কী দোষ করেছিল শেখ রাসেল, শুকান্ত বাবু, ১০ বছরের আরিফ সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত? আজকের প্রজন্ম কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজে। আসলে ১৫ আগস্ট ছিল সুপরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালির স্বাধিকারকে অস্বীকার করা এবং এর প্রতিশোধ নেওয়া। ১৫ই আগস্ট ছিল বাঙালির পরিচয় বা জাতি সত্তার ওপর আঘাত করা। ১৫ই আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, তার পরিবারকে হত্যা করে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর একটা চেষ্টা।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং এর পিছনের কুশিলবদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন করা এই প্রজন্মের অন্যতম দাবি। কারা সেই ষড়যন্ত্রকারী ? যেন তা নতুন প্রজন্ম জানতে পারে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যারা ’৭১ সালের বাঙালির বিজয় মেনে নিতে পারেনি, মূলত তরাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সুবিধাভোগীরাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের কার্যকলাপে তা প্রমাণ পাওয়া যায়।

যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গত দুই বছরে যুবলীগের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রথমত জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে যুবলীগের একটি পরিছন্ন কমিটি উপহার দিয়েছেন। যুবলীগ একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে যুবলীগ সুনামের সাথে ঢাকাসহ সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় যুবলীগ যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে আছি। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য। মানব সেবাই রাজনীতির মূল অনুষঙ্গ। শোকাবহ এই আগস্ট মাসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা করোনার এই মহাসংকটে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। আর অন্যদিকে বিএনপি জামায়াত করছে দেশধ্বংসের ষড়যন্ত্র। দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সদা সজাগ থাকতে হবে।

করোনার এই মহা সংকটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনার শুরু থেকে যুবলীগ সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে যুবলীগ সবসময় মানুষের পাশে ছিলো এবং থাকবে।

বিএনপি-জামায়াত এর উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা সব সময়ে সমালোচনায় ব্যস্ত, করোনার এই মহা সংকটে অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এটাই বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে খুনি জিয়া জড়িত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কারণে খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার করতে হবে। আমরা যুবলীগ জিয়ার বিচার দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়া খুনিদের পুর্নবাসন করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ভোগদখল করেছেন। আইন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করেছে। শুধু জিয়া নন, তার উত্তরসুরি বিএনপি-জামাতও রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। নিজের স্বার্থে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে চলেছেন।

ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন এর সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. মামুনুর রশীদ, তাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন খসরু, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান রহমান মাসুদ, তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) সম্পাদক মো. শামছুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. হারিছ মিয়া শেখ সাগর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এড. মুক্তা আক্তার, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, সহ-সম্পাদক আবদুর রহমান জীবন, মো. মনিরুজ্জামান পিন্টু, কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জি. মো. মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল, এড. সওকত হায়াতসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

এইচ/ওআ