ন্যাভিগেশন মেনু

অডিও রেকর্ড ফাঁস

৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে বুটেক্স ভিসির নীল নকশা


বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ্ আলিমুজ্জামানের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষক ও এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের ৪-৫ জন সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গত ৩ আগস্ট উপাচার্য একটি মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার পরিকল্পনা করা হয়, এই সংক্রান্ত ৪০ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড বাংলাদেশ পোস্ট-এর হস্তগত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বের হয়ে এলো উপাচার্যের আন্দোলন বানচালের নীল নকশা।

অডিও রেকর্ডে উপাচার্য বলেন, ''বুটেক্স থেকে কেউ আন্দোলনে গেলে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা উপাচার্যের পক্ষ থেকে আগেই দেওয়া হয়েছিল। আমরা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম কিন্তু ছাত্রদের এক দফা দাবির সাথে নেই। অন্যান্য শিক্ষদের উদ্দেশ্যে ভিসি বলেন তোমাদের অনেকের যখন জন্মই হয় নি তখন থেকে আমি আওয়ামী লীগ করতাম। আগামীকাল ৪ আগস্ট শিক্ষক ও কর্মচারীরা পৃথক পৃথক ব্যানারে শান্তি সমাবেশ করবেন।''

অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, মিটিংয়ে আলোচনা হয় যে ইতোমধ্যে যে সকল ভিসি বুটেক্সে ছিলেন তারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী না করে বেঈমানি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আওয়ামী লীগ থাকবে, অন্য দলের আখড়ায় পরিণত করতে দেওয়া হবে না। যারা আন্দোলন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন সভায় উপস্থিত বুটেক্স এ্যালামনাই সদস্য ও বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্সের সহ সভাপতি মাসুদুর রহমান।

অডিও রেকর্ড থেকে আরো জানা যায়, মিটিং-এ উপস্থিত ব্যক্তিরা বলেন, বিএনপি-জামাতের কেউ যদি মেধা তালিকার ক্রমানুসারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা যত ভালো করুক না কেন তাকে বুটেক্সে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে না। এটা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। সমস্ত নিয়োগ হবে দল ভিত্তিক। বুটেক্স এ্যালামানাই সদস্য এবং ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, বিএনপি যদি কোন সময় ক্ষমতায় আসেও তারা আমাদের সামনে কথা বলতে সাহস পাবে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উৎসব পাল নামের এক শিক্ষার্থী উপাচার্যের বির্তকিত কর্মকান্ডের জন্য ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাঁকে মৃত উল্লেখ করায় ওই ছাত্রকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়। যারা ফেসবুকে প্রোফাইল লাল করেছে তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হবে বলেও সভায় মতামত দেওয়া হয়।

যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা চাকুরি থেকে অপসারন করার দাবি তোলা হয় ওই সভায়। যারা সরকরি বিরোধী স্ট্যাটাস দিয়েছে সেগুলোর স্ক্রিনশর্ট নেওয়া হয় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বুটেক্স উপাচার্য ১ লা আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিপু এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরানের হাতে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্ত্বতা প্রকাশ করে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামক মানব বন্ধন এবং মৌন মিছিলে অংশ নেয়া ১৪ জন শিক্ষকের নাম উপাচার্য নিজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তুলে দেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৩৬জন শিক্ষার্থীর নাম তিনি নিজেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংশ্লিস্ট থানা এবং গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ্ আলিমুজ্জামানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নি।

বুটেক্সের জনসংযোগ শাখার সহকারি পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ পোস্ট-কে জানান, গত ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ৪/৫ জন সদস্য যারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের নেতৃত্বে উপাচার্যের রুমে একটি সভা আয়োজন করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় পরেরদিন ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এ্যালামনাই সদস্যরা আন্দোলনের বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, কোন ধরনে আলোচনা ছাড়াই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থিক ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলনে করে মিডিয়ায় তা ফলাও করে প্রচারের জন্য।  কিন্তু তিনি তা করেন নি। এই খাতে উত্তোলনকৃত টাকা দিয়ে বন্যার্তদের সহযোগীতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।