ন্যাভিগেশন মেনু

৪ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন


এইদিনে দার্শনিক, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন (১৮৬৩-১৯০২)। 

উত্তর কলকাতার শিমলা বা শিমুলিয়ায় (কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন হেদুয়া পার্ক সংলগ্ন বিখ্যাত দত্ত পরিবারে ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত একজন ধনবান এবং সফল সরকারি উকিল ছিলেন। এ পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে ইন্দো-মুগল যুগের সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লাভ করেছিল। জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিবেকানন্দের উদার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে তার আংশিক প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। 

তাঁর পারিবারিক নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। স্বামী বিবেকানন্দ এক অনন্য সাধারণ প্রতিভা—যিনি আধুনিক কালের ধর্ম-সংস্কৃতি এবং পরোক্ষভাবে ভারতীয়দের জাতীয় আত্মচেতনার রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন। 

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হিন্দুধর্মীয় জীবনব্যবস্থা, আচরণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও  তিনি হিন্দুধর্মের বহু আদর্শিক বিচ্যুতির কড়া সমালোচক ছিলেন। তিনি একটি ভাবাদর্শ প্রচার এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন কর্মসূচি প্রদান করেছিলেন। 

একজন গৃহশিক্ষকের নিকট নরেন্দ্রর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। কলকাতার মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে তাঁর স্কুল জীবন, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও পরে জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে (পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ) তাঁর কলেজ জীবন শুরু, এবং ১৮৮৩ সালে এখান থেকেই তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 

কলেজ জীবন থেকেই তিনি এক তৃপ্তিহীন পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান অন্বেষণে ব্রতী হন। তিনি ব্যাপক ও গভীরভাবে পড়াশুনা শুরু করেন। তাঁর বৌদ্ধিক বা একাডেমিক আগ্রহের মধ্যে ছিল দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি। 

একজন যুব-সত্যানুসন্ধানকারী হিসেবে ঈশ্বর জ্ঞানলাভের প্রতিও তাঁর গভীর আগ্রহ জন্মলাভ করে। তিনি রাজা রামমোহন  রায়ের বেদান্তবিষয়ক গ্রন্থাদি পাঠ করে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন। 

১৮৯৩ সালে শিকাগোতে একটি সর্বধর্মীয় কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য ক্ষেত্রির মহারাজা তাঁকে সাহায্য করেন। সেখানে তাঁর বক্তৃতা ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে। তিনি সেখানে ভারতের অধ্যাত্মবাদী ঐতিহ্যের কথা বললেও বিশেষ কোনো ধর্ম প্রচারের চেষ্টা করেননি। 

তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, জনগণকে তাদের ধর্ম থেকে ধর্মান্তরের তিনি বিরোধী। এর পূর্বে তিনি ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সময়ের স্রোতধারায় এমন কিছু মূহুর্ত আসে যখন বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষসহ অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিস্টধর্মের আচার-অনুষ্ঠানে অতৃপ্ত হয়ে এমন একটি বাণী বা বার্তা শোনার জন্য অপেক্ষা করে যা তাদের অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করতে পারবে। 

বিবেকানন্দের বাণী ও ব্যক্তিত্ব  তাদের অন্তরে রেখাপাতের সৃষ্টি করে এবং এ ধর্ম ব্যাখ্যাকর্তা আরও কিছুদিন আমেরিকায় থেকে ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের বিশেষ করে বেদান্ত ও যোগের শিক্ষাকে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য এক ধরনের বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষিত জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন।

তিনি বোষ্টন, ডেট্র্য়েট, নিউ ইয়র্ক, বাল্টিমোর, ওয়াশিংটন, ব্রুকলিন প্রভৃতি শহর থেকে বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ লাভ করেন। বহু আমেরিকান নারী-পুরুষ তাঁর শিষ্যত্বলাভ করেন এবং বেশ কয়েকজন তারঁ সঙ্গে ভারতে চলে আসেন। তিনি আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ডে গেলে সেখানে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও অভিজাত সম্প্রদায় তাঁর বক্তৃতায় আকৃষ্ট হন। 

১৮৯৭ সালে তিনি ক্যাথলিক মিশনের মডেল অনুসারে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর দুই বছর পর এ প্রতিষ্ঠানের ভৌত কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কলকাতার উপকণ্ঠে বেলুর মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়বার আমেরিকা ও ইউরোপ  ভ্রমণের পর তিনি মাত্র কয়েক বছর জীবিত ছিলেন। 

এ সময়ের মধ্যেই স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিশনের অধীন বেশ কয়েকটি মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এরমধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, রাকৃষ্ণ হোম, রামকৃষ্ণ পাঠশালা ইত্যাদি। 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।

এস এস