ন্যাভিগেশন মেনু

‘কেউ যদি পোলারে একটা হুইল চেয়ার দিতো দোয়া করতাম’


‘স্বামী মইরা গেছে ৯ বছর আগে। কোন ভাতা টাতা পাই না। জন্মতেই ছেলেটি প্রতিবন্ধি। হাঁটতে পারে না, কথা কইতে পারে না। আমার প্রতিবন্ধি পোলাটা বেশি ওজন হের লইগ্যা অনেক কষ্ট হয়। রোদ্রের মধ্যে হারাদিন ঘুরে ৩/৪শ' টিয়া পাই ওই টিয়া দিয়া কোন রহম চাউল ডাইল কিনইয়া নেই। আমার একখান কাপড়ও নাই। আমার পোলার হুইল চেয়ারটি ভাঙ্গাচুরা, তাই ঠ্যালতে অনেক কষ্ট হয়। কেউ যদি আমার পোলারে একটা হুইল চেয়ার দিতো দোয়া করতাম।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গংগাপুর ৬নং ওয়ার্ডের তাহেরা বেগম।

তাহেরা বেগমের স্বামী মারা গেছে প্রায় ৯ বছর আগে। তিনি প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জরার্জীণ একটি হুইল চেয়ারে বসে রয়েছে ১৮ বছর বয়সি প্রতিবন্ধী ছেলে সজিব। ছেলেকে নিয়ে ছোট বড় বাজারের অলি-গলিতে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন।

তাহেরা বেগমের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। সংসার চালানোর মতো কেউ নেই। দুই মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিলেও এক মেয়ের স্বামীর বাড়িতে ঝামেলার কারণে সেও এসে মায়ের কাছে থাকেন। এই অবস্থায় প্রতিবন্ধী ছোট ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষা করেই কোনও রকমে চলছে সংসার।

এছাড়া স্বামী মারা যাওয়ার আগে উপজেলার খায়েরহাট হতে একটি সংস্থা ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই টাকার চাপ তো আছেই। ওই ঋণের টাকার জন্য এই অসহায় মহিলার সাথে এনজিও কর্মীরা খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তাহেরা বেগম বলেন, করোনার আগে ঢাকায় বস্তিতে থাকতেন আর ওখানে ভিক্ষা করে সংসার চলতো। করোনার কারণে এখন গ্রামে এসে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পায়। এই টাকা দিয়ে কোনও রকম সংসার চালায়।

এখন কেউ তেমন একটা ভিক্ষা দিচ্ছে না বলে জানান তাহেরা বেগম।

ছেলের নামের একটা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও ওই টাকায় কিছুই হয় না বলে জানান তাহেরা বেগম । অনেক কষ্টে তাদের জীবন চলছে। কেউ তাদের খবর নেয় না।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধি ছেলেটির হুইল চেয়ার ছিল না। দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ডে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহৃত এই জরার্জীণ হুইল চেয়ারটি ছেলেকে দেন। এটাই তার চলাচলের একমাত্র বাহন। হুইল চেয়ারটি জরার্জীণ হওয়ায় ঠ্যালতে তার অনেক কষ্ট হয়।

এএম/সিবি/এডিবি/