ন্যাভিগেশন মেনু

১০ ডিসেম্বর

বোমা-রকেটে বিধ্বস্ত ঢাকা বেতার কেন্দ্র ও কুর্মিটোলা বিমানবন্দর


১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র এবং কুর্মিটোলার সেনা ব্যারাকের ওপর  হামলা চালায়।

এদিন নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত রাষ্ট্রসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। এক কোটি শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের এদিন সমঝোতা চুক্তি হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান ও তাদের দোসর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চালাচ্ছিল। এত দিনে তারা বুঝে গেছে এ যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা একদমই নেই। এ সময় তারা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে।

সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় ধরে চলছিল এ তালিকা তৈরির কাজ। দেশের শিক্ষিত শ্রেণী অর্থাৎ শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবীদের রাখা হচ্ছিল এ তালিকায়।

এদিন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী।  মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে।

কয়েকটি জাহাজ ভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সিঙ্গাপুর পালানোর পথে মিত্র নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।

সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এদিন রংপুর ও দিনাজপুর জেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করা হয়। রাতে পাকিস্তনি বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালানোর সময় শহরের অদূরে যৌথ বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

বাকিরা আত্মসমর্পণ করে।দেশের অধিকাংশ জেলা ইতিমধ্যে হানাদার মুক্ত হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ঢাকায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী।

পালাবার পথ না পেয়ে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত পাকিস্তানিরা। রণাঙ্গনে ‘মুক্তি’ শব্দটি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে নিজেদের প্রবল প্রতাপশালী মনে করা পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে।

ফলে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। তবে তারা পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করেন। তার গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়।

একাত্তরের এদিনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভ ভরে তিনি বলেন, কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা। আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনও আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।

এদিন খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমীন। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিরোধ গড়ে তিনি শহীদ হন। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় বাহিনী কয়েক দিন ধরে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালায়।

ওআ/ এস এস