ন্যাভিগেশন মেনু

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন নিজের উন্নয়নকে মানবজাতির উন্নয়নের অংশ হিসেবে গণ্য করেছে, নিজের ভাগ্যকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রেখেছে এবং চীনা জনগণের স্বার্থ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থকে সংযুক্ত করেছে। চীন সক্রিয়ভাবে বৈশ্বিক উন্নয়নের সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে এবং আরও বেশি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। 

 ‘উন্নয়ন হলো সব সমস্যা সমাধানের চাবি এবং জনগণের সুখ অন্বেষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক শীর্ষসম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ন্যায়সঙ্গত, উন্মুক্ত, সার্বিক ও সৃজনশীলতা-কেন্দ্রিক উন্নয়নের ধারণা উত্থাপন করেন এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের সহযোগিতা বেগবানে চীনের প্রস্তাব পেশ করেন। ছয় বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম সাধারণ বিতর্কে প্রেসিডেন্ট সি বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রস্তাবও উত্থাপন করেন এবং নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। 

চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি মনে করেন, ‘বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রস্তাব’ বিশ্বের উন্নয়নে খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন বরাবরই উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাঁড়াবে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চীন ইতোমধ্যেই ১৬৬টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ৪০০ বিলিয়ন ইউয়ান সাহায্য দিয়েছে, প্রায় ৩ হাজার সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, ৬ লাখেরও বেশি সাহায্যকারী পাঠিয়েছে এবং জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়নলক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে ১২০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশকে সহায়তা দিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মহামারী প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন পুনরুদ্ধারে চীন আগামী তিন বছরে আরও ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এ বছর। 

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশ হলেও চীন প্রধান সাহায্যকারী দেশে পরিণত হয়েছে। চীন আফ্রিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিপুল সাহায্য দিয়েছে, চীনের এ ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

দারিদ্র্য নির্মূল হলো এজেন্ডা-২০৩০’র প্রধান উদ্দেশ্য। ২০২০ সালের শেষ দিকে চীনে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পুরোপুরিভাবে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। চীন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ১০ বছর আগে এজেন্ডা-২০৩০’র দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছে। বিশ্বের দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে চীন ৭০ শতাংশেরও বেশি অবদান রেখেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস বলেছেন, বিগত ১০ বছরে বিশ্বের দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে।

দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে অর্জিত মূল্যবান অভিজ্ঞতা বিশ্বের সঙ্গেও ভাগাভাগি করেছে চীন। জনগণের মধ্যে বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সাহায্যসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে অন্য দেশগুলোও সাহায্য করেছে চীন। 

২০০১ সালে বিদেশকে সাহায্য করার পথ সূচিত হওয়ার পর চীনের চুনছাও প্রযুক্তির মাধ্যমে পাপুয়া নিউগিনিসহ ১০৬টি দেশ ও অঞ্চল উপকৃত হয়েছে এবং কার্যকরভাবে এ সব দেশের দারিদ্র্য, পানি ও ভূমির ক্ষয় এবং মরুকরণসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছে।

বর্তমান পরিবর্তন ও মহামারীর কারণে বিশ্বের আর্থ-বাণিজ্যিক পরিস্থিতির গভীর সংস্কারের সম্মুখীন হচ্ছে। উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়ন করা এবং দেশীয় প্রথাকে মূল হিসেবে ধরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রথাকে শক্তিশালী করে একটি নতুন উন্নয়নের ধারণা গড়ে তোলা হলো উচ্চ গুণগতমানের উন্নয়নের চাহিদা।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ও মুক্ত বাণিজ্য বন্দর নির্মাণ থেকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা পর্যন্ত, চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা ও আন্তর্জাতিক ভোক্তা পণ্য মেলা পর্যন্ত, বিদেশি বিনিয়োগ আইন কার্যকর করা থেকে কয়েক বার শুল্ক ও বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক তালিকা কমানো পর্যন্ত, চীনের ধারাবাহিক উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ ব্যবস্থায় চীনের সত্যিকারের বহুপক্ষবাদকে লালন করা এবং উচ্চ মানের বিশ্ব অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে। -- তথ্যসূত্র: সিএমজি