ন্যাভিগেশন মেনু

চুল ঘন করার উপায়


নারী কিংবা পুরুষ উভয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে চুলের ভূমিকা অতুলনীয়। মানসিক নানা চাপ, পরিবেশ দূষণ, শারীরিক অসুস্থতা এমন নানা কারণে চুল পাতলা হতে শুরু করে। এমনকি চুলে নানা কেমিক্যাল প্রয়োগের কারণেও চুল পড়তে পারে। আমাদের ছয় ঋতুর দেশে আবহাওয়াভেদে এবং আমাদের যত্নআত্তির ত্রুটির কারণে চুলের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে কমে আসছে।

চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে ! আর এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন? কী ভাবে চুল ঘন করবেন সেটাও বুঝতে পারছেন না! চিন্তার কারণ নেই! আজ আমরা জানবো কীভাবে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করা যায়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক চুল ঘন করার উপায় সমূহ

অ্যালোভেরা

পাতলা চুল ঘন করা যায় ঘৃতকুমারীর সঠিক ব্যবহার করার মাধ্যমে। এর জন্য একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে চামচ বা ছুড়ির সাহায্যে এর জেলটি বের করে নিন।  জেল-টাকে মসৃণভাবে পেস্ট করে নিন। এবার মাথার স্ক্যাপ্ল-এ ভালো করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০-১৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ২ বার ব্যাবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা স্ক্যাপ্ল-এর মৃত কোষ মেরামত করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি চুলে ভলিউম এনে দেয়। পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করার সুযোগ না থাকলে অ্যালোভেরা জেল কিনে নিতে পারেন।

ডিম

একটি বাটিতে একটি ডিম ভেঙে নিন। এবার এর সাথে যোগ করুন ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। এই দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। এবার একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন ৩০-৪০ মিনিটের জন্য। তারপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন। ডিমে আছে প্রোটিন এবং সালফার যা চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে ঝলমলে ও সিল্কি। আর ডিমের সাথে থাকা অলিভ অয়েলও চুল ঘন ও সিল্কি করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

আমলকী

১ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ার সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এতে টকদই মিশিয়ে নিলে সেটা চুলের জন্য আরও বেনিফিসিয়াল হবে। চুল ড্রাই ও ড্যামেজ হলে মধুও অ্যাড করা যেতে পারে। ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করে এবার এটি চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন এবং নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে। আমলকীতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং ভিটামিন সি, যা চুলের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখে এবং চুলের গোড়ায় কোলাজেন-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে চুল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। লেবুর রস চুলের খুশকি দূর করে এবং আমলকী গুঁড়ার সাথে যুক্ত হয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

মেথি

পাতলা চুল ঘন করা যায় মেথি ব্যবহারেও। কীভাবে? ২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভিজিয়ে রাখা মেথি দানা ছেঁকে নিয়ে এর সাথে হাফ কাপ পরিষ্কার পানি যোগ করে ব্লেন্ডার-এ মসৃণভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই পেস্টটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন। চুলের স্বাস্থ্য বজায় রেখে চুলের বৃদ্ধির জন্য মেথি একটি শ্রেষ্ঠ উপকরণ। এটি স্ক্যাল্প-এর প্রদাহ দূর করে, খুশকি তাড়ায় এবং চুল মজবুত করে।

মেহেদি

পাতলা চুল ঘন করা যায় মেহেদির ছোঁয়াতে। কীভাবে? মেহেদি পাতা অল্প পানি দিয়ে বেটে নিন। আপনি চাইলে এর সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল যোগ করতে পারেন। এবার এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল আবৃত করে রাখুন ৩০-৩৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি মাসে ২/৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মেহেদি চুলের আদর্শ খাদ্য। এটি চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এখন মার্কেটে হেনা প্যাক কিনতে পাওয়া যায়, তাই মেহেদি পাতা বাটাবাটির ঝামেলা এড়াতে সেটাও ইউজ করতে পারেন।!

পেঁয়াজের তেল

দুটো পেঁয়াজ, তিন-চার কোয়া রসুন কুচি করে কেটে নিন, সেটি  নারকেল তেলে সাথে মিশিয়ে গরম করুন। যতক্ষণ না পর্যন্ত পেঁয়াজ রঙ বাদামী হছে ততক্ষণ নাড়তে থাকুন। তারপর সেই গরম তেলটি মাথায় মাসাজ করুন ১০-১৫ মিনিট ধরে। ঘণ্টা খাণেক রেখে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।

ক্যাস্টর অয়েল 

ক্যাস্টর অয়েল খুব পরিচিত একটি হেয়ার অয়েল যা চুলের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য খুব উপকারী। এটির বহু গুণ, এটি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। এই অয়েলটিতে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও প্রোটিন যা চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। ক্যাস্টর অয়েল সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে ভাল করে মাসাজ করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট (রাতে শোয়ার আগে)। সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যাবহার করুন ভালো ফল পেতে।

আমন্ড অয়েল

আমন্ড অয়েল চুল পড়া কমিয়ে চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। আমন্ড অয়েল চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া রোধ করে। চুল ঘন করার উপায়ে এই তেলটি খুব উপকারী। এটি গরম করে চুলে মাসাজ করুন ১০-১৫ মিনিট তারপর ঘণ্টা খানেক রেখে ধুয়ে ফেলুন।         

আদার রস

আদার রস চুলকে ঘন করে। আদার রসের গুণাগুণ প্রচুর। এটি চুলের পুষ্টি যোগায়, চুলের গোড়া শক্ত করে, চুলকে মজবুত করে। আদার রস চুল পড়া বন্ধ করে। আদা থেঁতো করে তার রস চুলে ১০-১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন।

জবা ফুলের তেল

চুল ঘন করার উপায়-এ একটি বিশেষ উপকরন হল জবা ফুলের তেল। এই তেলটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুল পড়া চিরতরে বন্ধ করে। নারকেল তেল গরম করে তাতে জবা ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি পাত্রে রেখে দিন। প্রতিদিন শোবার আগে স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন।

গরম তেল মাসাজ

নারকেল তেল গরম করে মাথার স্ক্যল্পে মাসাজ করলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, চুলের গোড়া শক্ত করে। চুলকে পড়া থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন রাতে শোবার আগে গরম তেল মাসাজ করুন উপকার পাবেন।

সরিষার তেল 

সুন্দর, বড়, মজবুত করতে সাহায্য করে সরিষার তেল। সরিষার তেলের অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় তা চুলের খুশকি ও চুলকানি দূর করে। সরিষার তেল চুল পড়া রোধ করে। এ ছাড়াও চুলকে সুরক্ষিত করতে সম্ভব হলে বাইরে যাওয়ার সময় কাপড় কিংবা ওড়না দিয়ে চুলকে ঢেকে রাখুন।

দই

দই প্রত্যেকের ঘরেই থাকে। চুলে দই লাগালে চুল বাড়ে। চুলে দই ও মধু মিশিয়ে লাগান, কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলের দৈর্ঘ্য বাড়ে।

শ্যাম্পু করার আগে নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও শরীরে আমিষ এর অভাবে চুল গজাতে পারে না ফলে চুল পাতলা হয়ে যায়।মাথার ত্বকে নানাবিধ রোগ ও অতিরিক্ত খুশকির কারণে চুল পড়া বেড়ে যায়।