ন্যাভিগেশন মেনু

৮ ডিসেম্বর

পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ মিত্রবাহিনীর


৮ ডিসেম্বর এই দিন পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী চারদিক থেকে হানাদারদের ঘিরে ফেলেছ। রণাঙ্গনে ব্যাপক সুফল পেতে থাকে মিত্রবাহিনী।

ভারত-পাক যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে রাওয়ালপিণ্ডির কোন অগ্রগতি নেই; আর পূর্বে কেবল পশ্চাৎগতি। যৌথবাহিনীর এ অগ্রগতির ফলে পাকিস্তান সরকার ও তাদের মিত্র দেশগুলোর বুঝতে বাকি থাকে না যে, যুদ্ধে তাদের হার নিশ্চিত।

এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি পালন এবং সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য ভারত ও পাকিস্তনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করে।

এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিতে হবে। উপমহাদেশে শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে।

এদিন মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ বিভিন্ন ভাষায় হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধ করে বাণী ও লিফলেট আকাশে ছড়িয়ে দেন।

দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই আশ্বাস দেন যে, আত্মসমর্পণ করলে পাকবাহিনীর প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে।

জেনারেল মানেকশ-এর এই আহ্বান আকাশবাণী থেকে নানা ভাষায় বার বার প্রচার করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা কিছুতেই আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। কুমিল্লায় হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়।

রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। রাতে মিত্রবাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের আর জে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের তিনদিকে আক্রমণ চালানো হয়।

সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লেঃ দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে ভাটপাড়া হয়ে চৌদ্দগ্রামের বাঘের চর দিয়ে এসে বিমান বন্দরের পাক সেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে।

রাতের মধ্যে বিমান বন্দরের ঘাঁটিতে অবস্থানরত পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পাক সেনাদের প্রধান ঘাঁটির পতন হয়। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমান বন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়।

বিমান বন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া কতিপয় পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদারমুক্ত হয়। এদিন কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানা পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত হয়।

১৯৭১ সালে ৮ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় পটুয়াখালী জেলা। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথম অতর্কিত বিমান হামলা চালায় পটুয়াখালী শহরের কালিকাপুর এলাকায়। এতে মাতবর বাড়ীর ১৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শহীদ হন ১৯ জন নিরীহ মানুষ। নির্বিচারে চলে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ।

ওআ/এস এস