ন্যাভিগেশন মেনু

বর্ষণ উড়িয়ে রাজধানী ঢাকায় শরৎ বন্দনা


প্রকৃতির লীলা বোঝা দায়। তাইতো আশ্বিনের মাঝেও এই রোদ্দুর, এই মেঘ-বৃষ্টি। বৃষ্টির বহর দেখে মনে হয়না এখন শরৎ কাল। রাজধানী ঢাকা নগরের বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে এর মধ্যেই ফুটেছে সফেদ কাশফুল। অন্যদিকে নীল পেজো তুলোর মেঘেরা দখলে নিয়ে নিয়েছে বর্ষার ঘনকালো আকাশ।

শরতের চিরন্তন এই স্বভাবেই শিশিরভেজা ঘাসের বুকে থোকায় থোকায় জমেছে শিউলিগুচ্ছ, ছড়াচ্ছে মৌতাত। এই মৌতাতে ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু শরৎ এসেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। তবে আজ শুক্রবার শরতের আকাশ ছিল রীতিমতো রোদেলা উষ্ণ। তবু শরতের রূপটিকে মেলে ধরেছিল ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। 

রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে ছিল তাদের এ আয়োজন। করোনা ভাইরাস মহামারিতে নগরজুড়ে আনন্দ আয়োজনে আরোপিত হয় কঠোর বিধিনিষেধ। মহামারির প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে উৎসব আয়োজনের অনুমতি পায় আয়োজকরা। বেশ অনেক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ঋতু উৎসব আয়োজন করা হলেও মহামারি শুরু হওয়ার পর অনুমতি মেলেনি। 

তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ, শিল্পকলা একাডেমির কফি হাউজ প্রাঙ্গণকেই বেছে নিচ্ছেন তারা। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় স্বপন সরকারের ঢোলবাদন পর্বের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরৎ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সঙ্গীত-নৃত্য-আবৃত্তিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন।আয়োজনের শরৎ কথন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। 

সঙ্গে ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।

এ সময় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে আমাদের বাড়ি। বাড়ির আশপাশে কাঁশগুচ্ছ ফুটে থাকত।আমি ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়।এখন সুযোগ পেলে চলে যাই উত্তরা বা দিয়াবাড়ীতে, কাঁশের সমারোহে। 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের কথা যতই বলি না কেন, বাঙালিত্বকে তা কখনও কেড়ে নিতে পারবে না। এই আলো ঝলমল শহরে শরৎ উৎসব আয়োজনের জন্য সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী বড় একটা ধন্যবাদ পাবে। 

নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন ও বিকাশের মধ্য দিয়ে আমরা বাঙালির শেকড়কে বিস্তৃত করতে চাই। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, আজ আমরা এ শরৎ উৎসবে চাইবো, অতি দ্রুত এ মহামারি চলে যাক।  আমাদের সেই অদ্ভূত গন্ধের, অতি সবুজ পৃথিবীটা আমরা আবার ফিরে পাব, যেখানে নিরাপদ থাকবে সব প্রাণী।

শরৎ উৎসবে যোগ দিতে আসা কয়েকজন বলেন, মেট্রোরেলের ঝক্কিঝামেলা পোহায়ে ওই চারুকলায় আসা বেশ ঝামেলার। তার চেয়ে এখানে বেশ খোলামেলা। সবুজ ঘাসের ওপর কেমন শিশির পড়েছে। সকালের রোদটা একটু একটু করে তেঁতে উঠছে। গান হচ্ছে, নাচ হচ্ছে। চারুকলা ছিল এতদিনের ঐতিহ্য। 

ওখানে বকুলতলা, কাঠালচাঁপার ঘ্রাণ বড় মিস করছি। কিন্তু এবার এখানেই বেশ ভালো লাগছে। এখানেই নগরবাসীর সুবিধে। আর এবার শরৎ উৎসব সপ্তাহের ছুটির প্রথম দিন শুক্রবার হওয়াতে কী যে ভালো লাগছে।ছুটির দিন বলে যানজটের ঝামেলা নাই। উত্তরা থেকে কত দ্রুত এসেছি। খুব ভালো লাগছে। কতগুলো দিন আমরা ঘরবন্দি হয়ে ছিলাম। ঋতু উৎসবে এসে আমরা নিজেরাও নিজেদের রাঙিয়ে নিলাম।উৎসব প্রাঙ্গণ তখন নানা বয়সী মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে, তাদের পরনে বাহারি পোশাক। 

জামদানি, কাতানের সঙ্গে নারীরা পড়েছেন পুঁতির মালা, কারও কানে ঝুমকো দুল। কেউবা কাজলটানা চোখের ঠিক ওপরে পরেছেন ছোট্ট টিপ। তাদের সঙ্গে আসা পুরুষ সঙ্গীটিও বাদ যাবেন কেন! তারা অনেকেই পরেছেন টাইডাই, অলওভার প্রিন্টের পাঞ্জাবি। ছোট্টরা ঘুরে বেড়াচ্ছে উৎসবের প্রাঙ্গণের এদিক, সেদিক।

এ পর্বে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে নজরুলসঙ্গীত ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’, রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে। ’ সম্মেলক কণ্ঠে শরৎ আগমনী সঙ্গীত ‘শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে’ পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। প্রয়াত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হকের সংগঠন সুরতীর্থ পরিবেশন করে ‘আমার নয়ন ভোলানো এলে।

এরপর সম্মেলক নৃত্যপর্বে ‘ওগো আমার আগমনী আলো’ গানের সঙ্গে পারফর্ম করে অনিক বসুর দল স্পন্দন। ‘শরৎ আমার স্নিগ্ধ অপরূপ তুমি অনন্যা’ গানের সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে তামান্না রহমানের দল নৃত্যম। নাঈম হাসান সুজার দল নৃত্যজন নৃত্য পরিবেশন করে ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া’ গানের সঙ্গে। এছাড়াও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। 

বাফার নাচের দলটি ‘খর বায়ু বয় বেগে চারিদিক’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটির সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন। একক সঙ্গীত পর্বে লালনসঙ্গীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা রায়, মামুন জাইদ খান, সজীব, প্রিয়াঙ্কা গোপ। আবৃত্তি পর্বে অমর রায়ের ‘শরতের গন্ধ পাওয়া যায়’ পরিবেশন করেন আহকাম উল্লাহ। 

তানভীর মোকাম্মেলের ‘নয়ন তারা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলী।

এস এস